কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

রোগটা রাষ্ট্রের

রোগটা রাষ্ট্রের

দেশে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। কোন ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে একজন মানুষ আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়, সে নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের মতামত। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে যে কথাটি বলা হয় তা হলো—মানুষের জীবনটা যখন তার কাছে একটি বোঝা হয়ে যায়, যখন তার দাঁড়ানোর কোনো জায়গা থাকে না, নিঃসঙ্গতা যখন তাকে আঁকড়ে ধরে, যখন জীবনের প্রয়োজনীয়তা তার কাছে ফুরিয়ে যায়, তখন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় মন্ট্রিমস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে তিনি তার কারখানায় অসম্মান, বৈষম্যের শিকার ও নিগৃহীত হওয়ার বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায়। তিনি কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকায় স্ত্রীসহ থাকতেন। ঘটনার আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে ইদ্রিস আলী চাকরিতে অনিশ্চয়তা, দায়িত্বের অতিরিক্ত চাপ এবং কর্মকর্তাদের প্রতি অসন্তোষের কথা তুলে ধরেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যারা মেশিন চালাই, আমাদের প্রতি কোনো সম্মান নেই। এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেও পার্মানেন্ট না করে ডেইলি বেসিসে রাখা হয়েছে।’ ওই কারখানার দুই কর্মকর্তা তাকে বারবার হেনস্তা করেছেন এবং তারা তার চাকরি স্থায়ীকরণের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন বলে ইদ্রিস আলী উল্লেখ করেন। নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরপরই রাত ১২টার দিকে তার অজান্তে বাসায় বিষপান করেন ইদ্রিস আলী। পরে বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

ইদ্রিস পরিশ্রমী ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিলেন। অফিসের কিছু কর্মকর্তার বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ইদ্রিস মানসিক চাপে ছিলেন। সহকর্মীদের অনেকেই স্থায়ী হলেও, তার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন ইদ্রিস আলী।

এদিকে গত সোমবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে সত্তর বছর বয়সী মীর রুহুল আমিন লাইনে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। মীর রুহুল আমিনের আত্মহত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই আত্মহত্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মীর রুহুল আমিনের প্রতি পরিবারের সদস্যদের অবহেলার কথা হয়েছে, যা সঠিক নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মীর রুহুল আমিন একজন পেঁয়াজ চাষি। স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৬৪ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তাকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা ঋণ অবশিষ্ট রয়েছে। জমি বর্গা নিয়ে ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন তিনি। এ জন্য ঋণ করেছিলেন। ওই ঋণের কিস্তি চালানোর জন্য স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনের কাছ থেকেও হয়তো ঋণ করেছিলেন। পেঁয়াজের দাম কম। তাই ঋণ শোধ করার দুশ্চিন্তায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা।

এই দুটি মৃত্যুর পেছনে রাষ্ট্র এবং সমাজের দায় আছে। ইদ্রিস আলী ও রুহুল আমিনের আত্মহত্যা আমাদের বলে দেয় স্বাধীনতার ৫৪ বছরের আমরা শ্রমিক-কৃষকবান্ধব একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলে পারিনি। এই সমাজে তারা বড়ই অসহায়, তাদের দাঁড়ানোর কোনো জায়গা নেই। তাই শুধু মুখে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের’ কথা বললে হবে না। মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১০

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১১

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১২

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

১৩

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১৪

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১৫

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১৬

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৭

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৮

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

১৯

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

২০
X