স্বর্ণকুমারী দেবী কবি, নাট্যকার, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী। তিনি ১৮৫৫ সালের ২৮ আগস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্বর্ণকুমারী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দশম সন্তান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভগ্নি। সমকালীন রীতি অনুযায়ী স্বর্ণকুমারী বাড়িতে শিক্ষালাভ করেন। বারো বছর বয়সে তাকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জানকীরাম ঘোষালের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তার স্বামী কলকাতার ভদ্রলোক সমাজের একজন প্রগতিশীল সদস্য ছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে পর্দা পরিত্যাগ করার পরামর্শ দেন এবং লেখালেখি ও সমাজসেবার কাজে উৎসাহিত করেন। ছোটবেলা থেকেই স্বর্ণকুমারী সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রতিভার ছাপ রাখেন এবং জোড়াসাঁকোর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ও সাহিত্য কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বর্ণকুমারী ত্রিশ বছর মাসিক ভারতী পত্রিকার লেখক ও সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তার দীপ নির্বাণ (১৮৭০) উপন্যাসটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তার অন্যান্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে—ছিন্ন মুকুল, স্নেহলতা বা পালিতা (১৮৯২-৯৩) এবং সম্ভবত তার সবচেয়ে সেরা গ্রন্থ কাহাকে (১৮৯৮)। এ গ্রন্থটি ‘দ্য আনফিনিশড সং’ নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। স্বর্ণকুমারী দেবী ১৮৭৯ সালে গীতিনাটক বসন্ত উৎসব প্রকাশ করেন। সম্ভবত এটি ছিল বাংলায় (বাংলাদেশে) লিখিত প্রথম অপেরা। তিনি বাংলায় ২৫টি গ্রন্থ রচনা করেন। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারে সক্রিয় স্বর্ণকুমারী বিধবা এবং দরিদ্র নারীদের সাহায্যার্থে ‘সখী সমিতি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। ১৯৩২ সালের ৩ জুলাই তিনি কলকাতায় মারা যান।
মন্তব্য করুন