চাল নিয়ে চালবাজি, কারসাজি যেন থামার নয়। সারা বছর চালের যে চাহিদা, তার চেয়ে দেশে উৎপাদনের পরিমাণ অধিক। এরপর রয়েছে বছরে বিরাট পরিমাণ চালের আমদানি। শুধু তাই নয়, এক বছরে বিশ্ববাজারে কমেছে চালের দাম। এ ছাড়া রয়েছে সন্তোষজনক মজুত। এতদসত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে চালের দাম বৃদ্ধি অত্যন্ত হতাশার, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বৃহস্পতিবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আবার দেশে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন। অথচ দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ৪ কোটি ৭ লাখ টন। এ ছাড়া দেশে গত এক বছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে শুধু দেশজ উৎপাদনের চালই উদ্বৃত্ত থাকার কথা। এরপর বিশাল পরিমাণের আমদানি। তার ওপর এবারও ভালো হয়েছে বোরোর ফলন। কোনো রকমের সংকট না থাকা সত্ত্বেও কেন মোটা থেকে মাঝারি বা মাঝারি থেকে চিকন—সব ধরনের চালের দামই হুহু করে বাড়ছে? এটা খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন।
জানা যাচ্ছে, গত বছর ৯ জুলাই নাজির বা মিনিকেট চালের দাম ছিল কেজি ৬০ থেকে ৭৮ টাকা। সেখানে এ বছর কেজিপ্রতি ব্যয় করতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। আরও বেশি বেড়েছে পাইজাম বা আটাশ চালের দাম। গত বছরের একই সময়ে এ জাতের চাল কিনতে প্রতি কেজিতে ব্যয় হতো ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত। এ হিসাবে দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। দাম বেড়েছে গরিবের স্বর্ণা বা মোটা চালেরও। গত বছরের একই সময়ে এর প্রতি কেজির দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫২ টাকা, যা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। সেই ভাতের জন্য বাড়তি দামে চাল কিনতে চিড়েচ্যাপ্টা হতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের শুধু নয়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সব মানুষের। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে চালের ক্রমবর্ধমান বাড়তি দাম জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা আরও কঠিন করে তুলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এসবের জন্য দায়ী কী এবং কারা? কারা দায়ী তা বুঝতে খুব যে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার রয়েছে, তা কিন্তু নয়। এ কথা সবাই জানেন যে, এজন্য দায়ী বাজারে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট। মজুতকারী ও করপোরেট সিন্ডিকেটই এর নেপথ্যের কুশীলব। আর রয়েছে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারা এবং জনবান্ধব বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারার সরকারি সংস্থাগুলোর স্পষ্ট ব্যর্থতা ও অক্ষমতা। গত বছর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর নতুন করে দেশ গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, সিন্ডিকেটমুক্ত বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাও নিশ্চয়ই তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। মানুষ নিশ্চয়ই ভেবেছিল, বিগত সরকারগুলো বিশেষ করে গত দেড় দশকে যে কাজটি করা সম্ভব হয়নি, এবার সেই সিন্ডিকেট নামক ভূতের কবল থেকে রক্ষা পাবে তারা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বাজারে বহাল তবিয়তে রয়েছে সেই সিন্ডিকেট। অব্যাহত রয়েছে তার নিয়ন্ত্রিত ছড়ি। আমাদের প্রত্যাশা, এ সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন