কত রকমের প্রতারণা ও প্রতারকের যে অস্তিত্ব, আনাগোনা ও তৎপরতা রয়েছে আমাদের সমাজে, তার কূলকিনারা করা মুশকিল! এবার বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি চক্রের সদস্যরা শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং তা বিদেশে পাচার করেছে। এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারকে।
গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টিতে সবার দৃষ্টিগোচর হয়। প্রকাশিত খবর অনুসারে, ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ’—এমন প্রতিশ্রুতিতে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের কর্ণধার খায়রুল বাশার বাহার এবং তার চক্রের সদস্যরা। অবশ্য কোনো কোনো গণমাধ্যম শিক্ষার্থীর সংখ্যাকে হাজারের ওপর বলে প্রকাশ করেছে। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বাশারকে গত সোমবার মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সিআইডি কর্মকর্তার ভাষ্যে জানা যায়, খায়রুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র পরিচালনা করছিলেন। চটকদার বিজ্ঞাপন, ভুয়া ভিসা প্রসেসিং, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া প্রতিনিধিত্বের নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরাসরি অফিস এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে টাকা আদায় করে চক্রটি। তদন্তে দেখা যায়, প্রতারিত অনেক শিক্ষার্থীর নামে কোনো আবেদনই বিদেশি প্রতিষ্ঠানে করা হয়নি। আবার অনেকেই বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে পড়েছেন বিপাকে। মামলার প্রাথমিক তদন্তকালে এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রতারিতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই এনআই অ্যাক্টসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় অভিযোগ করেছেন। কিছু গণমাধ্যমের খবরে ভুক্তভোগীদের বরাতে প্রকাশ করা হয়েছে, গড়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের নিজস্ব তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৮৫০ শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা হাজারের বেশি বলে দাবি তাদের। সিআইডির অনুসন্ধান বলছে, অভিযুক্তরা গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ নিজেদের নামে ও অন্যদের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে উত্তোলন করে তা দিয়ে স্থাবর সম্পদ ক্রয়, ব্যবসা পরিচালনা এবং অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে রাজধানীর গুলশান থানাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় একাধিক মামলা করেছেন। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর, ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলনে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি এ বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেন।
আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে এ প্রতারণা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিষ্ঠানটি শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেনি; ক্ষতিসাধন করেছে পরিবারের মূল্যবান অর্থের। একইভাবে এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, দিনের পর দিন রাজধানীতে বসে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ প্রতারণা চালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় ব্যর্থতা রয়েছে প্রশাসনেরও। আমাদের প্রত্যাশা, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। পাশাপাশি এ ধরনের প্রতারণার সঙ্গে আর কোনো চক্র সক্রিয় আছে কি না এবং ভবিষ্যতেও যেন সক্রিয় হতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন সজাগ থাকবে।
মন্তব্য করুন