মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পাহাড়ের মাটিতে রাম্বুটান, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রাম্বুটান। ছবি : কালবেলা
গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রাম্বুটান। ছবি : কালবেলা

পাহাড়ের পথ বেয়ে সড়কের পাশ ঘেঁষে এক কৃষকের বাড়ি। বাড়ির আঙিনায় গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি। আর ঠিক পাশেই এক টুকরো ঢালু জমিতে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে লাল-সবুজ রঙের বিদেশি ফল রাম্বুটান। পাহাড়ি মাটিতে এই অতি উচ্চমূল্যের ও মানসম্মত ফলের চাষ সাড়া ফেলেছে স্থানীয়ভাবে। কৌতূহলী মানুষজন প্রতিদিন ভিড় করছেন বাগান দেখতে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার হাতিয়াপাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে এই রাম্বুটান বাগান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাম্বুটান চাষ শুধু মাটিরাঙ্গা নয়, পুরো পার্বত্য অঞ্চলে কৃষির সম্ভাবনাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে পারে।

ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) অফিসের তথ্যানুয়ায়ী মাটিরাঙ্গার হাতিয়া পাড়া, কাজি পাড়া, নতুন পাড়া, ১০নং ব্যাঙমারা, সাপমারা, তপ্ত মাস্টার পাড়া, বাইল্যাছড়ি, রাবার বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে ৩০ জন কৃষককে ২০টি করে ভিয়েতনামি জাতের রাম্বুটানের চারা বিতরণ করা হয়।

উচ্চমূল্যের ফল ফসলের জাত সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্পের আওতায় (আরএমটিপি) পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) বাস্তবায়নে এবং মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বক্ষণিক পরামর্শে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রুমা বেগমের নামে তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে ৩০টি রাম্বুটানের চারা বিতরণ করা হয়।

মাত্র ৩ বছরের ব্যাবধানে কৃষক রফিকুল ইসলাম বিদেশি ফল রাম্বুটান চাষ করে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছেন। আজ সেই বাগানেই ধরা দিয়েছে আশার আলো। বাগানের ১২টি গাছে ফল এসেছে। ফলগুলো অপরিপক্ব অবস্থায় সবুজ রং ধারণ করলেও পুষ্ট বা পাকলে লালচে রঙের হয়। আকর্ষণীয় ও স্বাদে অত্যন্ত মিষ্টি যা স্থানীয় বাজারে দারুণ সাড়া ফেলেছে। স্বাদে অনেকটা লিচুর বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।

এদিকে রফিকুল ইসলাম শুধু ফল বিক্রি করেই থেমে থাকেননি। তিনি নিজের বাগানের রাম্বুটান গাছ থেকে ২০০টি কলম করেছেন, যা তিনি প্রতিটি ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন। এই উদ্যোগ একদিকে যেমন চাষ সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে, অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবেও কাজ করছে।

কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আইডিএফ কর্মকর্তারা একবার আমাদের এলাকায় আসেন। প্রথমে লেবুর চারা দেওয়ার কথা ছিল। পরে তাদের দেখানো ভিডিওতে রাম্বুটান চাষ দেখে আগ্রহী হই এবং অনুরোধ করি রাম্বুটানের চারা দেওয়ার জন্য। তারা আমাকে ৩০টি চারা দেন। গাছগুলো অনেক যত্নে লালন করতাম বলে অনেকে পাগলও বলত। কিন্তু আমি দমে যাইনি। এখন প্রতি কেজি রাম্বুটান ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করছি, ২০০টি কলম দিয়েছি। সর্বমোট ৩০/৪০ কেজি ফল বিক্রি করতে পারব। আগামীতে সব গাছে ফল আসবে।

মাটিরাঙ্গা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, শুরু থেকেই আমরা কৃষক রফিকুল ইসলামকে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছি। রাম্বুটান চাষে ঝুঁকি কম, ফলন ভালো এবং বাজারে এর দামও অনেক বেশি। আশা করি, পাহাড়ে এই ফলের চাষ আরও জনপ্রিয় হবে।

রাম্বুটান চাষ এখন শুধু সম্ভাবনার কথা নয়, বাস্তবতার উদাহরণ জানিয়ে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) কৃষিবিদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উচ্চমূল্যের ফল ফসলের জাত সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণ শীর্ষক ভ্যালু চেইন প্রকল্পের আওতায় আমরা রাম্বুটানের চারা বিতরণ করি। এই অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু রাম্বুটান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রুমা বেগমকে আমরা ৩০টি রাম্বুটান গাছের চারা সরবরাহ করি। বর্তমানে তার বাগানে ভালো ফলন হয়েছে এবং তিনি বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন।

ফলন বাড়ানো ও কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এই প্রকল্পের আওতায় রাম্বুটানের পাশাপাশি অ্যাভোকাডো, খেজুর, সিডলেস লেবু, কপি, কাজুবাদাম, গৌরমতি আম ও ভ্যানিলাসহ বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফলের চারা বিতরণ করা হয়েছে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, রফিকুল ইসলামের এই সফলতা আমাদের জন্য গর্বের। আমরা তাকে শুরু থেকেই পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছি। তার সফলতা অন্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে। তাছাড়া বিদেশি ফল চাষে মাটিরাঙ্গার হাতিয়া পাড়ার কৃষক রফিকুল ইসলামের এই সাফল্য প্রমাণ করে, পরিকল্পিত উদ্যোগ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে পাহাড়ি এলাকায়ও কৃষির নতুন দিগন্ত উন্মোচন সম্ভব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র   

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১০

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১১

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১২

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১৩

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৪

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৫

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৬

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৭

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৮

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

১৯

নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে ২ রাজনৈতিক দল

২০
X