সম্প্রতি বিএসইসির কমিশনার জনাব আলী আকবর বলেন, পুঁজিবাজার খেলার জন্য প্রস্তুত। পুঁজিবাজারের খেলার মাঠের রেফারি হলো বিএসইসি। এখন আলোচনায় আসা যাক, বিএসইসি পুঁজিবাজারকে খেলার জন্য কতটুকু প্রস্তুত করেছে। খেলোয়াড়দের খেলার জন্য আহ্বান করার পূর্বে খেলার মাঠ প্রস্তুত করতে হয়। আমাদের পুঁজিবাজারের খেলার মাঠ প্রস্তুত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এই টাস্কফোর্স পুঁজিবাজারের মাঠে খেলার জন্য প্রস্তুত করতে কতিপয় সুপারিশনামা প্রণয়ন করে। এর মধ্যে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত আইনি সংশোধনী চূড়ান্ত আকারের টাস্কফোর্স প্রদান করে, বাকি সংশোধনীসমূহ—যেমন আইপিও-সংক্রান্ত এবং মার্জিন লোন-সংক্রান্ত সংশোধনীর খসড়া প্রদান করে। সুপারিশকৃত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের চূড়ান্ত সংশোধনীর এখন পর্যন্ত গেজেট প্রকাশিত হয়নি, অন্য সংশোধনীসমূহ এখনো খসড়ায় বিদ্যমান। এ অবস্থায় আমাদের পুঁজিবাজারের মাঠ কি খেলার জন্য প্রস্তুত?
এ পৃথিবীতে যত খেলা আছে প্রতিটি খেলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান প্রধান উপাদান রয়েছে। যেমন এ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলো ফুটবল ও ক্রিকেট। এই উভয় খেলায় খেলোয়াড়দের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হলো জয়। তেমনি পুঁজিবাজারে খেলোয়াড়দেরও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য হলো বিনিয়োগ থেকে মুনাফা অর্জন।
পৃথিবীতে প্রচলিত প্রতিটি খেলায় যেমন দুটি পক্ষ রয়েছে, তেমনি পুঁজিবাজারে খেলায়ও দুটি পক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পক্ষ হলো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে অর্থায়ন নিশ্চিত করা, আরেকটি পক্ষ হলো পুঁজিবাজার থেকে সংগৃহীত অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা প্রদান করা। ফুটবল খেলায় যে রকম রেফারি রয়েছে এবং ক্রিকেট খেলায় যে রকম আম্পায়ার রয়েছে; ঠিক তেমনি পুঁজিবাজারে রয়েছে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। রেফারি বা আম্পায়াররা যে রকম খেলার জন্য মাঠ প্রস্তুত করে দেন; তেমনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা খেলার জন্য মাঠ প্রস্তুত করে দেয়। এখন দেখার বিষয় হলো, পুঁজিবাজারে পক্ষভুক্ত খেলোয়াড় কে এবং কারা। পুঁজিবাজারে অর্থের জোগানদাতা তথা তারল্য সরবরাহকারীর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী যাদের ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো দায়বদ্ধতা বা কোনো আইনগত অধিকার নেই। পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহের স্থায়ী খেলোয়াড় হলো মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড। আবার পুঁজিবাজারের জন্য একটি সুষম মাঠ করতে হলে প্রয়োজন বহুজাতিক কোম্পানি এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইপিও বাজারে আনা।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তারল্য সংকট, তাই সরকার কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সংশোধনীর চূড়ান্ত সুপারিশনামা প্রদান করা সত্ত্বেও, নিয়ন্ত্রক সংস্থার তা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের বর্তমান পুঁজিবাজারকে খেলোয়াড়দের জন্য প্রস্তুত করতে হলে সবার আগে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনীর গেজেট দ্রুত প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক। বাজার মূলধনের ন্যূনতম ২৫% মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড এবং বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের অংশগ্রহণের পর টাস্কফোর্স সুপারিশকৃত আইপিও বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ এবং সর্বশেষ মার্জিন ঋণ-সংক্রান্ত সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তাই জনাব মো. আলী আকবরকে তথা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আমাদের বিনীত নিবেদন, টাস্কফোর্স কর্তৃক সুপারিশকৃত আইনের সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ ব্যতীত আদৌ কি পুঁজিবাজার খেলার জন্য প্রস্তুত? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলতে হবে যেই লাউ সেই কদু আর উত্তর যদি না হয়, তাহলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সব আইনের সংশোধনী গেজেট প্রকাশ করা উচিত। অতঃপর বহুজাতিক লাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বাজারে আনার জন্য আইপিও-সংক্রান্ত বিধিমালার সংশোধনী প্রয়োজন। সর্বশেষ চূড়ান্তভাবে মার্জিন ঋণ-সংক্রান্ত বিধিমালার সংশোধনী প্রণয়ন করার পরে বলতে হবে যে, আমাদের এ পুঁজিবাজার খেলার জন্য প্রস্তুত।
লেখক: সুলাইমান রুবেল, বিনিয়োগকারী
মন্তব্য করুন