কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্তত ১৩টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশার ও উদ্বেগের। যে কোনো অপরাধের বিচারের জন্য আইন-আদালত থাকা সত্ত্বেও মানুষের আইন হাতে তুলে নেওয়ার এ প্রবণতা কোনোভাবেই ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না।

ঘটনা সম্পর্কে সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত সংবাদে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে—এমন কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট গত শনিবার বিকেলে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেদিনই সন্ধ্যায় বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রাম থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন রোববার সকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া ও পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। বিকেলের দিকে একটি মিছিল আলদাদপুর গ্রামের দিকে যায়। গ্রামে প্রবেশ করে মিছিলটি হঠাৎই সহিংস রূপ নেয়। এ ঘটনায় বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় তারা। এ সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন। দ্রুত সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে নেন। অভিযুক্ত কিশোরকে রোববার বিকেলে আদালত সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

দেশে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অতীতে নাসিরনগর, রামুর মতো সহিংসতা বা ট্র্যাজেডির নজির যেমন রয়েছে; তেমনি বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। অথচ ওইসব ঘটনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তা সঠিক নয়। এসব ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। হয় কারও নামে ফেক আইডি খুলে সেখানে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে ধর্মের বিরুদ্ধে; নয়তো কোনো মৌখিক অভিযোগ তুলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা অন্য কোনো উপায়ে। আবার এসবের পেছনের কারণও ছিল নানা সময়ে নানা রকমের। কারণ যাই থাক, কোনো সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে কোনো ধরনের ন্যায্যতা থাকতে পারে না। সমাজ ও রাষ্ট্র তার মান্যতা দেয় না। কারণ সবকিছুর জন্য রয়েছে বিদ্যমান আইন ও বিচার ব্যবস্থা। কেউ যদি সত্যিকারই ধর্ম অবমাননার মতো কিছু ঘটিয়েও থাকে, তার জন্য অবশ্যই বিচারের কাঠগড়া রয়েছে। তা তোয়াক্কা না করে কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া অত্যন্ত বেদনার ও গর্হিত অপরাধ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন ইউএসসিআইআরএফের সাম্প্রতিক তথ্যপত্রে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার­ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সুতরাং সরকারের উচিত এ বার্তাকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া।

আমরা মনে করি, রংপুরের সহিংসতাসহ সামগ্রিকভাবেই সমাজ যে একটি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা। প্রায় প্রতিদিনই খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলদারির মতো অপরাধ সংঘটন তারই সাক্ষ্য দেয়। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। আমাদের প্রত্যাশা, যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি রংপুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, সামাজিক সংহতি ও ধর্মীয় সম্প্রীতি শুধু আইনকানুন দিয়েই হয় না; দরকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চা ও জাগরণ। আইনের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি আবশ্যক পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বোধের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিপিএলে বাড়তে পারে আরও এক দল, আলোচনায় নতুন নাম

‘১৭ বছর পর ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে এসেছে’

নিজের চেহারা নিয়ে যা বললেন ধানুশ

একসঙ্গে জন্ম নেওয়া পাঁচ শিশুকে গাভি উপহার

এক পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ পদে শিক্ষক নিয়োগ

হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

দেবের সঙ্গে রোম্যান্সে নজর কেড়েছেন জ্যোতির্ময়ী

আটটির মধ্যে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছি : ট্রাম্প

বরিশালের এক নেত্রীকে সুসংবাদ দিল বিএনপি

ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা, গণপিটুনিতে নিহত ১

১০

প্রসূতির মৃত্যু, পালিয়ে গেলেন চিকিৎসক-নার্স

১১

টাইপকাস্ট হতে চান না তৃপ্তি

১২

আয়ারল্যান্ড সিরিজ মিস করবেন তারকা ক্রিকেটার!

১৩

ফাতিমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজয়

১৪

পদ্মার চরে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা

১৫

জেনে নিন আজকের স্বর্ণের বাজারদর

১৬

ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে নতুন অভিযানে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

১৭

কড়া নিরাপত্তায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির 

১৮

গুমের মামলায় সশরীরে নয়, ভার্চুয়াল হাজিরা চান গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তারা

১৯

পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

২০
X