কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

উঠছে না বটে, নামছে কিন্তু ঠিকই

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
উঠছে না বটে, নামছে কিন্তু ঠিকই

এটা সবাই বলবেন যে, সংস্কৃতির মান উঠছে না বটে, তবে নামছে কিন্তু ঠিকই। ওদিকে আবার সংস্কৃতির কথা যে বলা হয় না তা নয়, তবে তেমন গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় না যেভাবে বলা দরকার। আসলে সংস্কৃতি কিন্তু সভ্যতার চেয়েও বড় ও গভীর। সংস্কৃতি বড় তার বিস্তৃতির দিক থেকে। কারণ সংস্কৃতির ভেতর অনেক কিছু, প্রায় সবকিছুই থাকে। অর্থনীতিই থাকে ভিত্তিতে; কিন্তু ভূগোল, মানবিক সম্পর্ক, প্রকৃতির সঙ্গে বোঝাপাড়া, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, শিক্ষা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্প-সাহিত্য কোনো কিছুই বাদ থাকে না। সভ্যতাও কিন্তু সংস্কৃতিরই অংশ। এককথায় সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়। এ পরিচয় অন্য যে কোনো পরিচয়ের তুলনাতে অধিক বিশ্বাসযোগ্য। শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে, প্রকৃত মেরুদণ্ড কিন্তু শিক্ষা নয়, সংস্কৃতিই। শিক্ষা নিজেই সংস্কৃতির অংশ হওয়ার দাবিদার।

এটাও তো দেখা যায় যে, সভ্যতার মৃত্যুর পরও সংস্কৃতির স্মারকগুলো বেঁচে থাকে। তারা রয়ে যায় ইতিহাসে, ঐতিহ্যে, সাহিত্যে, স্থাপত্যে, সংগীতে, লোককাহিনিতে, এমনকি রূপকথাতেও। সেদিক থেকে সংস্কৃতির সঙ্গে সভ্যতা যে পাল্লা দিয়ে পারবে, তা মোটেই নয়।

সংস্কৃতির আবার গভীরও। কেননা মানুষের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ধর্ম ও বিজ্ঞানচিন্তা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, আইনকানুন, বলা যায় মূল্যবোধের নিজস্বতাও সংস্কৃতির ভেতরেই প্রবহমান থাকে। বললে বোধকরি ভুল হবে না যে, সংস্কৃতি ও সভ্যতার নির্যাস বটে। মানুষ যে একই সঙ্গে সামাজিক ও বুদ্ধিমান প্রাণী, তার সে পরিচয়টা সংস্কৃতি যেভাবে ধারণ করে; অন্যকিছু সেভাবে পারে না। সভ্যতা হচ্ছে ব্যবহার্য; সংস্কৃতি মানুষের অন্তরে-বাইরে অবস্থিত। কিন্তু মুখে যাই বলি না কেন, সংস্কৃতিকে আমরা বাংলাদেশের মানুষরা, গুরুত্ব দিতে অভ্যস্ত নই। রাজনীতিকরাই তো রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকেন এবং রাষ্ট্র কর্তৃত্ব করে সমাজের ওপর; দেখা যায় যে রাজনীতিকরা সবকিছুর কথাই বলেন, কিন্তু সংস্কৃতির ব্যাপারে সরব হন না। প্রশ্ন উঠবে এর কারণ কী? একটা কারণ এমন হতে পারে যে, রাজনীতিকরা নান্দনিক অর্থে যাকে সংস্কৃতি বলা হয়, তার বিশেষ চর্চা করেন না। সাহিত্য ভালোবাসেন না, গানেও তেমন উৎসাহ নেই, শিল্পকলার নিদর্শন গৃহের শোভাবর্ধনে কাজে লাগালেও তার সমঝদারিত্বে পারঙ্গম নন। তাদের অনেকেরই রুচি প্রশংসনীয় নয়। রাজনীতিকদের ভাষা ব্যবহার বহুসময়েই আওয়াজপ্রধান হয়, কখনো কখনো অশালীনও।

সংস্কৃতিতে রাজনীতিকদের উৎসাহহীনতা এবং তাদের সাংস্কৃতিক রুচির দুর্বলতার আরেকটা কারণ হয়তো জ্ঞানের অভাব। সংস্কৃতি কিন্তু জ্ঞানেরও সক্রিয়তার দ্বারা পুষ্ট হয়। জ্ঞানের মূল্য এখন পৃথিবী-জুড়েই কমতির দিকে। জ্ঞানের চেয়ে প্রযুক্তির মূল্য অধিক। সাহিত্যেও উৎসাহ কমে আসছে দেখা যায়। নোবেল পুরস্কার তো সেরা সম্মান, কিন্তু সম্প্রতি এক বছর এমন হয়েছে যে, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে একজন সংগীত রচয়িতা ও চর্চাকারীকে, পুরস্কার গ্রহণে যার নিজেরই সংকোচ ছিল। আরেক বছর তো পুরস্কার দেওয়া বন্ধই ছিল, ব্যবস্থাপকদের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে। তবে বিশ্বে যাই ঘটুক, আমাদের অবস্থা যে ভালো নয়, তা তো মানতেই হবে।

দৈনিক পত্রিকায় এক সময়ে সাহিত্যের পাতা বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করত, এখন পাতার আয়তন আগের তুলনায় খাটো হয়ে এসেছে, পাতার প্রতি পাঠকের আকর্ষণ যে বেড়েছে, তাও নয়। নিয়মিত প্রকাশিত কোনো মাসিক পত্রিকা এখন বাংলাদেশে নেই। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর অনেক পাঠক ছিল, সেসব পত্রিকা একে একে মারা গেছে। এরকম দশা এ দেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। ভাবাও যায়নি। পুস্তক প্রকাশিত হয়, কিন্তু পুস্তকের সমালোচনা কদাচিৎ চোখে পড়ে। এসবই সংস্কৃতির ব্যাপারে রাজনীতিকদের উৎসাহহীনতার সঙ্গে যুক্ত। সংস্কৃতির উন্নয়নে তারা না আগ্রহী, না উৎসাহদাতা; তাদের অধিকাংশই বরং খুশি মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনা উন্নত হচ্ছে না দেখে। রাজনীতির মূলধারায় যারা ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন, অর্থাৎ জাতীয়তাবাদীরা, তাদের উৎসাহ লুণ্ঠনে এবং সম্পদ পাচারে; তারা উন্নয়নের বড় বড় পরিকল্পনা নিতে উৎসাহী, কারণ তাতে যাতে বড় বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা যায়। দুর্নীতিকেই নীতি করে ফেলেছেন। অতি সংক্ষেপে বলতে গেলে, এরা ছিলেন এবং এখনো আছেন, পুঁজিবাদের অন্ধকার দিকের পথযাত্রী। পুঁজিবাদের একটা আলোর দিক ছিল। যেমন, স্বদেশের প্রতি অনুরাগ, উৎপাদনে বিনিয়োগ, জ্ঞানের-চর্চা, শিল্প-সাহিত্যের প্রতি পক্ষপাত। পুঁজিবাদের আলোর দিকটাকে গ্রহণ করবেন এমন অন্তর্গত শক্তি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রশাসকরা রাখেন না। জ্ঞানের চর্চায় এবং সংস্কৃতির বিকাশে জাতীয়তাবাদীদের প্রতিপক্ষ সমাজতন্ত্রীদের উৎসাহ থাকার কথা; সেটা অবশ্যই ছিল; কিন্তু সমাজতন্ত্রীরা আলোর চর্চা করবেন কীভাবে, জাতীয়তাবাদীদের নানাবিধ নিষ্পেষণে তারা তো মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারেননি। সমাজতন্ত্রীদের দমন করাটাই ছিল জাতীয়তাবাদীদের স্ব-আরোপিত প্রধান কর্তব্য। সে কর্তব্য পালন থেকে তারা বিন্দু পরিমাণও বিচ্যুত হননি।

সমাজতন্ত্রীদের তারা প্রলুব্ধ করে কাছে টানতে চেয়েছেন, না পারলে জেল-জুলুম হত্যার মধ্য দিয়ে নিঃশেষ করে দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। পুঁজিবাদী সংস্কৃতির মুনাফালিপ্সা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও ভোগবাদিতা তারা ধারণ করেছেন এবং সন্দেহ কী যে এই জিনিসগুলো সংস্কৃতির সুস্থ চর্চার মিত্র নয়, শত্রু বটে।

রাজনীতির পুঁজিপন্থি নেতারা এটা চানও না যে জনমানুষের সংস্কৃতির স্তর উন্নত হোক। কারণ তারা চান না জনগণ সচেতন থাকুক। সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়নের বড় দিকটা হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারীরা সেটা চাইবেন কেন? তারা বরং চাইবেন জনগণ অজ্ঞতার ও প্রতিবাদহীনতার অন্ধকারেই নিমজ্জিত থাকুক। আলোর দিকে না গিয়ে, প্রশ্ন না করে তারা মেনে নিতে শিখুক। জনগণের মেরুদণ্ড শক্ত না হয়ে দুর্বল হোক।

সংস্কারের প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে, কিন্তু তারা শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে যে কোনো কমিশন গঠন করেনি, এজন্য অবশ্যই প্রশংসা দাবি করতে পারে। আমাদের মূল ধারার শিক্ষাব্যবস্থা এমনিতেই নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে আবার সংস্কারের ধাক্কাধাক্কি সে বেচারাকে নতুন জ্বালাতনের মধ্যে ফেলুক, এটা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। অতীতে দেখা গেছে যে, যখনই কোনো ‘বৈপ্লবিক’ সরকারের আগমন ঘটে, তখনই সঙ্গে সঙ্গেই, তারা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য ব্যস্তসমস্ত হয়ে পড়ে এবং মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা একটা ধাক্কা খায়। পরবর্তী ‘বিপ্লবী’ সরকার আবার নতুন সংস্কারে হাত লাগিয়ে ব্যবস্থাটাকে আরেকটা ধাক্কা দেয়। মূল যে সংস্কার প্রয়োজন সেটা হলো একটি অভিন্ন ব্যবস্থা চালু করা, রাষ্ট্রপরিচালকরা সে ব্যাপারটাকে বিবেচনার মধ্যেই আনেন না। বৈষম্যনির্ভর পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা আগের মতোই সহাস্যে টিকে থাকে।

পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার সংস্কারের নাম করে কয়েকটি অতিরিক্ত পাবলিক পরীক্ষার সংযোজন ঘটিয়ে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি সাধনে তৎপর হয়েছিল। তাতে দুর্বল ব্যবস্থাটা আরও একটা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ওঠায় তারা অতিরিক্ত পরীক্ষা রদ করেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড যে তাদের নিজেদের প্রণীত বাংলা পাঠ্যপুস্তক থেকে আচমকা ১১টি কবিতা এবং ৫টি গল্প ও প্রবন্ধ বাদ দিয়ে দিল, সেই বৈপ্লবিক কাজটি কেন করা হলো তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর তাদের অনেক নৃশংসতা, অপকর্ম ও দুর্নীতির তদন্ত করা হচ্ছে এবং হতে থাকবে, কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্মম ও ক্ষতিকর হামলাটি কেন ঘটেছিল, সে বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। তদন্ত হওয়াটা কিন্তু আবশ্যক। জানা দরকার শিক্ষার ওপর অমন হস্তক্ষেপটি কারা এবং কীভাবে ঘটিয়েছিল। কাজটা বর্তমান সরকার শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটা জানার ব্যাপারেও সহায়ক হবে।

বিদগ্ধজনরা বলেছেন যে, রাজনীতি হচ্ছে উপায় আর সংস্কৃতি হলো লক্ষ্য। কথাটা খুবই সত্য। আমরা সংস্কৃতির উন্নতি চাই। চাই অবিভক্ত সর্বজনীন সংস্কৃতি। সংস্কৃতির ওই উন্নতি বস্তুগত এবং সভ্যতাগত উন্নতিকে ধরে রাখবে। ২৩ বছর আমরা পূর্ব বাংলার মানুষরা পাকিস্তানি দুঃশাসনের অধীনে ছিলাম। ওই শাসকরা শুধু রাষ্ট্রগঠন নয়, রাষ্ট্রকে স্থায়ী করার প্রয়োজনে পাকিস্তানি নামে একটি নতুন জাতি গঠন করতে চেয়েছিল। এ সত্যটা তারা মানতে চায়নি যে, জাতিগঠনের জন্য সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রয়োজন এবং মানেনি এই বাস্তবতাকেও যে, পাকিস্তানের দুই অংশের ভেতর সাংস্কৃতিক ঐক্য তো ছিলই না, সেটা যে গড়ে উঠবে এমন সম্ভাবনাও ছিল অনুপস্থিত। তার মূল কারণ ভাষা। সংস্কৃতির প্রথম উপাদানটিই হচ্ছে ভাষা।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে শ্রেণিগত বিভাজন যেমন ক্ষতিকর, জাতিগত সংকীর্ণতাও তেমনি অবাঞ্ছিত। বর্তমান বিশ্বে সাংস্কৃতিক আন্তর্জাতিকতার পথে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদ বাজার খোঁজে এবং বাজারের প্রয়োজনে সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট থাকে। এখন সেটাই ঘটছে। পুঁজিবাদ বাণিজ্যভিত্তিক বিশ্বায়ন ঘটিয়ে মনুষ্যত্বনির্ভর আন্তর্জাতিকতাকে কোণঠাসা করছে। পুঁজিবাদীরা ব্যবসায় চালাচ্ছে মারণাস্ত্রের ও মাদকের, যে দুটি জিনিস সংস্কৃতিকে সবল করে না, দুর্বল করতে সদাব্যস্ত থাকে। ধনলিপ্সাও এক ধরনের মাদক বটে। নেশাগ্রস্ত না হলে ধনীরা আরও ধনী হওয়ার জন্য এমন উন্মাদ হবে কেন?

গোটা পৃথিবী এখন বিপন্ন। এ বিপদ মনুষ্যত্বের। এমন বিপদ আগে কখনো দেখা দেয়নি। এ মহাবিপদ থেকে মুক্তির অন্য কোনো পথ নেই; সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা ছাড়া।

পাঁচশ বছর আগে টমাস মুর নামে এক ইংরেজ লেখক একটি কল্পলোকের কথা বলেছিলেন, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে কিছু থাকবে না। মানুষের ঘরগুলো সব থাকবে খোলা, একটা দরজা রাস্তার দিকে, আরেকটা দরজা বাগানের দিকে। যাতায়াত অবাধ। মানুষ সেখানে ছয় ঘণ্টা কাজ করবে, আট ঘণ্টা ঘুমাবে। এক ঘণ্টা নির্ধারিত থাকবে খেলাধুলার জন্য। খেলাধুলা বলতে তিনি যে শুধু শারীরিক ব্যায়াম বুঝিয়েছেন তা নয়, সৃষ্টিশীল সংস্কৃতিচর্চাও বোঝাতে চেয়েছেন। তার স্বপ্নের পৃথিবীর আর থাকবে বক্তৃতা। প্রতিদিন সকালে মানুষ দলে দলে বক্তৃতা শুনতে যাবে। যাওয়াটা যে বাধ্যতামূলক, তা নয়, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। বক্তৃতার প্রতি আকর্ষণ আসলে তাদের জ্ঞানার্জনের স্পৃহা। সবকিছু মিলিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে থাকতে ও উন্নতি করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এরকম স্বপ্ন সমাজতন্ত্রীদেরও। তারাও চান ব্যক্তিগত মালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা এবং জীবনকে আনন্দে মুখরিত ও জ্ঞানে সমুজ্জ্বল রাখতে। কাজটা রাজনৈতিক বটে, কিন্তু লক্ষ্যটা সাংস্কৃতিক এবং পথটাও সংস্কৃতির চর্চার দ্বারা সমৃদ্ধ। না, সংস্কারে কুলাবে না, আবশ্যক হবে সামাজিক বিপ্লব। মনে রাখা চাই যে, উদারনীতিকরা কিন্তু বিপ্লবপন্থি নন, তারা বিপ্লববিরোধী। ধর্মীয় মৌলবাদীদের সঙ্গে তাদের ভীষণ বড় বড় ধরনের পার্থক্য; কিন্তু প্রগাঢ় ঐক্য এক জায়গাতে, সেটা হলো সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থার সংরক্ষণের চেষ্টা। আদতে দুপক্ষই বুর্জোয়া হতে চায়, পথটাই যা ভিন্ন।

সমাজে বৈষম্য বেড়েছে। সংস্কৃতি চায় ঐক্য; বৈষম্য সংস্কৃতির শত্রু। সেই শত্রুতা চলছে। সংস্কৃতির শত্রু দারিদ্র্যও। পুঁজিবাদী উন্নয়ন বৈষম্য এবং দারিদ্র্য দুটোকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে। উগ্র হয়ে উঠছে মুনাফালিপ্সা ও ভোগবাদিতা—যে দুয়ের ভূমিকা সবসময়ই সংস্কৃতিবিরোধী। এক কথায়, পুঁজিবাদই হচ্ছে বর্তমানকালে সংস্কৃতির মূল শত্রু।

সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম যে আসলে পুঁজিবাদবিরোধী সংগ্রাম, সেটা যেন না ভুলি। এ সংগ্রামে অগ্রপথিকের ভূমিকাটা থাকবে কাদের? থাকবে যারা হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান তাদের। হৃদয় ও মস্তিষ্ক দুটোই সংস্কৃতির প্রধান ভরসা; একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মহাবিপদ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে আভাসটা দিচ্ছে, সেটা যে শুধু বুদ্ধির যান্ত্রিকতার তা নয়, বুদ্ধির সঙ্গে হৃদয়ের বিচ্ছিন্নতারও।

লেখক: সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রের সভাপতি

ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার সম্পাদক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জন্মাষ্টমী : সাংবাদিকদের সাথে পূজা পরিষদের মতবিনিময় বৃহস্পতিবার

রাহুল গান্ধীকে হত্যার হুমকি

সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে

স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড

ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু

অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস 

চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু

১০

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

১১

আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু

১২

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

১৩

জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী

১৪

বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

১৫

সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা

১৬

সাদা পাথর বাঁচাতে ৫ দফা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে বার্সা-ভিয়ারিয়ালের ম্যাচ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের আপত্তি

১৮

টঙ্গীতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৫

১৯

গলায় চানাচুর আটকে শিশুর করুণ মৃত্যু

২০
X