

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ‘হাজী বিরিয়ানি হাউস’ এবং ‘নান্না বিরিয়ানি হাউস’ নাম ব্যবহার করে দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে প্রতারণা চালিয়ে আসছে। ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা ভাঙিয়ে তারা নিম্নমানের ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি হয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের শিথিল নজরদারিই এ অবৈধ ব্যবসাকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও উপজেলা পরিষদ মার্কেট সংলগ্ন স্থানে সামান্য হেরফের করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দুটি রাজধানীর জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর নাম নকল করে সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে।
ভোক্তা অধিকারকর্মীরা বলছেন, এটি পরিকল্পিত প্রতারণা।
সরেজমিন দেখা যায়, রান্নার পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। রান্নাঘরজুড়ে দুর্গন্ধ, চারদিকে ময়লা-আবর্জনা এবং ব্যবহৃত বাসনপত্র অপরিচ্ছন্ন। পচা ও নোংরা পরিবেশে মাংস ও চাল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। মাছি-পোকামাকড়ের আনাগোনা ছিল স্পষ্ট।
ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, টাইফয়েড, রক্ত বমি এমনকি ক্যানসারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’
চরভদ্রাসন উপজেলা কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি জয়নুল আবেদিন কামাল বলেন, ‘ক্রেতারা বুঝতে না পেরে নাম নকল করা হাজী ও নান্না বিরিয়ানির স্বাদ নিতে রেস্তোরাঁয় ঢোকেন। নিম্নমানের খাবার খেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে মানুষের মনে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
উপজেলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান বলেন, ‘চরভদ্রাসন বাজারে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানি হাউস ও নান্না বিরিয়ানির হাউস নাম ব্যবহার করে দুটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছে—বিষয়টি সত্য। আমার জানা মতে, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এ ধরনের ব্যবসার জন্য কোনো ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়নি।’
ব্যবসায়ী কাজী তায়েব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রমজান মাসে আমি একটি অভিযোগ করেছিলাম। পরে দোকানদারের এক কর্মীর মাধ্যমে জানতে পারলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার আগেই দলের একজন সদস্য দোকানদারকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ফলে দোকানদার দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে রাস্তার উপরেই রান্নাবান্না করে অনেক হোটেল ব্যবসায়ী খাবার পরিবেশন করছেন, যা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর।’
হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নামে খাবার খেয়ে লোহারটেক গ্রামের ইমরান বেপারী বলেন, ‘ব্যবসা বাড়ানোর জন্য দোকানদার হাজী বিরিয়ানির নাম দিয়েছে। এটি আসল হাজী বিরিয়ানি নয়। পুরান ঢাকার আসল হাজী বিরিয়ানির গন্ধই আলাদা। দূর থেকেই বোঝা যায়। বহুদিন ধরে এ অনিয়ম চললেও প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।’
রেস্তোরাঁর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরান ঢাকার বিখ্যাত হাজী ও নান্না বিরিয়ানির নাম ব্যবহার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সুনাম ভাঙিয়ে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এ কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা খাতুন বলেন, ‘এমন করলে বিষয়টি প্রতারণার শামিল। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবি করেন, আমাদের সব ধরনের কাগজপত্র আছে।
উল্লেখ্য, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নিম্নমানের খাদ্য বিক্রি, প্রতারণা ও ব্র্যান্ডের নাম অপব্যবহার গুরুতর অপরাধ। কিন্তু আইন প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগে প্রতারকরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন