সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সম্প্রীতি যেন কোনোভাবে বিনষ্ট না হয় এবং জাতি-ধর্ম-গোত্র-বর্ণ বা শ্রেণির ঊর্ধ্বে উঠে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখার যে কোনো বার্তাই সন্দেহাতীতভাবে আমাদের আশ্বস্ত করে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের সনাতনী সমাবেশ-২০২৫ নামে এক অনুষ্ঠানে সম্প্রীতির এই বার্তাই উচ্চারিত হয় বক্তাদের কণ্ঠে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট সেই সনাতনী সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সারা দেশের ৫৫টি জেলা থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা। অনুষ্ঠানে বক্তাদের ভাষ্যে উঠে আসে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে লড়াই ও অবদানের কথা। এসব লড়াই-সংগ্রামে কারও অবদান যেন খাটো করে না দেখা হয়—আলোচনায় উঠে আসে সে বিষয়ও। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন না হয়, সেদিকে সজাগ থেকে নতুন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে সুযোগ এসেছে, তা বাস্তবায়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানান বক্তারা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনো তাদের জন্য বাংলাদেশে দাঙ্গা হতে পারে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে নির্বাচন বানচাল হতে পারে। সেজন্য জাতীয় স্বার্থে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে আগামীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই, সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে সম্প্রীতি বজায় থাকুক। আমরা চাই, সনাতনীদের ওপর হওয়া অপকর্মের ঘটনাগুলোর বিচার হোক। প্রতিটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু হত্যাকাণ্ড, হামলা-নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার হওয়া উচিত।’
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রশ্নে অনুষ্ঠানে রাজনীতিকদের এসব বক্তব্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা আমাদের মতো দেশে রাজনীতি সব নীতিকে প্রভাবিত করে। ফলে রাজনীতিই পারে দেশের সব সংকট দূরীভূত করা কিংবা প্রশমিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের বিকল্প নেই। আমরা জানি, অতীতের বিভিন্ন সময় বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা পরে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। একই দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও সহ্য করতে হয়েছে এসব নিপীড়ন; আক্রান্ত জায়গাগুলোয় সাধারণত রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ বা ভোটের বিষয়টি কাজ করেছে। এ ধারাবাহিকতা ও প্রবণতা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। তবে গত বছর নজিরবিহীন এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বা আশা জাগ্রত হয়েছে, সেই রাষ্ট্র গঠন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন রাজনীতিকরাই। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে সত্যিকারই সম্প্রীতির ব্যবস্থা, শান্তির ব্যবস্থা; সে রাষ্ট্রে রাজনীতি কখনোই ব্যবহৃত হবে না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের হাতিয়ার হিসেবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমাদের প্রত্যাশা, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ভোটকেন্দ্রিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রবণতা বন্ধ হবে এবং এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করবে।
মন্তব্য করুন