‘ব্যাপার কী, খালি ইলেকশনের মাসের নাম ঘোষণা কোরছে। অহনো সঠিক দিন ঘোষণা কোরে নাই, ব্যস, লগে লগে বঞ্চক, ঠগ, জোচ্চর, ডাকা শুরু কোরলেন?’
‘ওই জঙ্গল, আমি তো কোনো দেশের নাম বলিনি, এটা ইন্ডিয়া, আসাম, ভুটান না নেপাল...’
‘থাক থাক আর সাফাই গাইতে হোইবো না, আমরা কি বুঝি না কোন দেশের লোক বাটপাড়, জোচ্চর।’
‘ওরে বুড়বক কথাটা আমার না, কথাটা হচ্ছে বাদশাহ জাহাঙ্গীরের বাংলার অধ্যাপক চিরসুন্দরের...’
‘এ্যাঁহ, চিরসুন্দার, ব্যাটা বাদশাহ জাহাঙ্গীরের বাংলার অধ্যাপক ইবনে খালেদ-উন যখন বুইড়া হোইবো তহনোও চিরসুন্দর থাকব?’
‘ক্যেন নয়। সত্য সবসময়ই সুন্দর।’
‘তায়লে, আইসা দেখি ঘাটপাড়, বইসা আছে বাটপাড়, এই কথাটা সুন্দর না কুৎসিত। সব সত্য সুন্দর না বুঝছেন!’
‘আরে তুইতো দেখি মিডিয়ার মতো বাংলার অধ্যাপক ইবনে খালেদ-উনের কথার খণ্ডিত অংশ নিয়ে হৈ চৈ শুরু কোরলি। পুরো লাইনটার অর্থ দ্যেখ?’
‘পুরা লাইনের মানে আবার কী দেখুম? “আইস্সা দেখি ঘাটপাড়, বইস্সা আছে বাটপাড়’ মানে তো সিম্পেল, নদী পার হোইতে আইসা দেখি নদীর ঘাটে বাটপাড় বয়া আছে। মানে হ্যেয় নদী পার করতে গেলে বাটপাড়ি কোরবো।’
‘বিষয়টা অনেকটা তোর কথার সাথে যায়, তবে আমি বলতে চাচ্ছি অন্য কথা। “আইসা দেখি ঘাটপাড়, বইসা আছে বাটপাড়” অর্থাৎ এখানে নদী মানে আমাদের বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা যেটা ভালো করার জন্য যার হাতে দায়িত্ব দিচ্ছি, সে জনগণের সাথে বাটপাড়ি কোরে নিজের আখের গোছাচ্ছে, আর জনসাধারণের সাথে জোচ্চুরি মানে বাটপাড়ি কোরছে।’
পাকিস্তানি বর্বর শাসকের পরিবর্তে যারা দেশ পরিচালনার ভার পেয়েছিলো তারা জনগণের কাঙ্ক্ষিত মুক্তির কথা না ভেবে কেবল নিজেদের উদর পুরতে যেয়ে বাংলাদেশের ধ্বংস ডেকে এনেছে। বাঙালি জাতির ধ্বংস ডেকে এনেছে। আমি বাংলাদেশের জন্মক্ষণের ঘাটপাড়ের কথা বোলছিলাম।’
‘ওম্মারে!! তোমাদের গ্রিসের মনীষী অ্যারিস্টটলের সমমানের অবিসংবাদিত নেতা তোমাদের সাথে বাটপাড়ি কোরলো?’
‘ভাই, তুই ক্যেনো বুঝিস না নেতা একা কী কোরবে? তখন তোর মোজাপরা নেতারা মিগ-বিমানের সাথে সাথে বাঘছাল নিয়ে এসে দেশের বারোটা বাজালো।’
‘বাঘছালের মইধ্যে ঘড়ি ফিট কোরছেননি যে, বারোটার ঘণ্টা বাজবো।’
‘আসলে তুই কি ঈশপের বাঘছালের গল্পটা পড়িসনি?’
‘অনেক ছুটো বেলায় পড়ছি তয় অহন মোনে নাই।’
‘ব্যাটা বাটপাড়, সত্যি কোরে বল যে ঈশপের বাঘছালের গল্পটা পড়িসনি। খামাখা এ্যতো নখরা করিস ক্যেনো!’
‘আপনে হালায় বুঝেন না, পেপারে ছাপলে ব্যেবাগতে জানবো যে আমি হালায় চাপাবাজ, ধাপ্পাবাজ নিজের গোয়ালকে নিজ কাঁচি দিয়া ফাড়তে চায় কন?’
‘আরে শোন তাহলে। একবার এক গাধা সমাজে সবাই ওকে গাধা, বেকুব, মূর্খ, নির্বোধ, তিমিরান্ধ বোলতো। তখন গর্দভ এমনি শত টিটকারি সইতে না পেরে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ কোরলেন। ভাবলেন যে এই নশ্বর জীবন আর রাখবেন না। যদি কোনো বন্য ব্যাঘ্র তাহারে ভক্ষণ করেন তাহা হোইলে এই সামাজিক অবহেলা হোইতে চিরমুক্তি পাইবেন। কিন্তু বিধিবাম। বিধাতা তাহার জন্য গভীর জঙ্গলে কবে যেন কোন শিকারি ব্যাঘ্র শিকার করিয়া তাহার ছাল ছাড়াইয়া বাড়ি যাইবার কালে অন্য ব্যাঘ্ররা শিকারিকে শিকার করায় পাশে শিকারির কংকাল ও বাঘের ছাল পড়িয়া ছিলো। আর এ্যতো দিনে ছাল শুকিয়ে টনটনা।’
‘তারপর ঘাদারে বাঘেরা খাইলো?’
‘আরে না, শোন না, গাধা তখন কী মনে কোরে বাঘছালটা ওভার কোটের মতো পরে, লোকালয়ে ফেরত এলো। এখন যেই প্রাণীই ওকে দেখে সে বাঘ মোনে কোরে ভয়ে পালায়। অনেকে দূর থেকেই অভিবাদন কোরে পালিয়ে যায়।’
‘আর ঘাদার আনন্দ দ্যেখে কে। কয়দিন আগেও হালায় চামচিকা ভি ওরে লাত্থি মারতো আর অহন ব্যেবাগতে হ্যেরে দ্যেইক্ষা অভিবাদন করে। ঘাদা ভাবলো এবার একটা পাজেরোতে চইড়া ঘুরবো।’
‘ধ্যাৎ, ঈশপের সময় পাজেরো মাজেরো ছিলো না। তখন গাধা তৎকালীন জানোয়ার সমাজের বাজারে যেয়ে এক সভায় যেই লেচার দিতে গ্যেছে, অমনি গাধার গলা দিয়ে ভ্যা ভ্যা কোরে গাধার ডাক বেরিয়েছে। ব্যস, সাথে সাথে পাবলিকে...’
‘গাধারে রামধোলাই, মব জাস্টিস। গলায় জুতার মালা, লগে লগে গালে জুত্রাঘাৎ, গাধা হালায় কুপোকাৎ।’
‘অনেকটা তাই। মুক্তিযুদ্ধের পর সবাইকে প্রশাসক বাঘছাল পোরতে বোললেন। ম্যাডাম চুফিয়া, জাতীয় কবির, জনাব ইলিয়াস, মোজাপর আহমেদ, গুরুদয়াল মনিন্দ্র সিং, ফরহাদ আজহার, মিয়া সলিম সবাই মহানন্দে বাঘছাল পরে ঘুরছেন।’
‘তহন কি এক ব্যাটাও বাঘছাল পরতে রিফিউজ করে নাই?’
‘এক্সশেপশেন অব দি ল’ থাকবেই, সে সময় একমাত্র বুদ্ধিজীবী কথাশিল্পী শওকত ওসমান বাঘছাল পরলো না। বললেন, গণতন্ত্রের জন্য লক্ষ লক্ষ জীবন বলি দিয়ে এক দলের দোসর হওয়ার ইচ্ছা নাই। কেউ যদি জোর কোরে বাঘছাল পরায় সেই ভয়ে বেশ কিছুদিন রাত্রে নিজের বাসায় ঘুমাতেন না।’
‘বাঘের বাচ্চা, সান অব টাইগার, দেখছেন পৃথিবীতে হক্কল সময় কিছু না কিছু সাচ্চালোক থাকবোই। তয় বাঘছাল পইরা পোরশাসন জনসাধারণের লগে কি বাটপাড়িটা কোরলো?’
‘আর কী, জনগণতন্ত্র-টন্ত্র ভুলে ওরা সব পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া, জায়গাজমি, বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এসব দখলে এ্যতো ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ ভায়ের শহীদের রক্তের কথা ভুলে কেবল টাকা টাকা শুরু। শহীদদের রক্তের সাথে ওরা বেইমানি কোরলো।’
‘পাবলিকের লগে বাটপাড়ি কোরলে, পাবলিক হ্যের প্রতিশোধ লোইবোই। কিন্তু ভাই বর্তমানে নির্বাচনের পর যেই প্রশাসক আইবো হ্যেরা মনে লয় আর পাবলিকের লগে বাটপাড়ি কোরবো না।’
‘কিন্তু এই কথা তোর মোনে হোচ্ছে কেন, যে এবার যারা জনসাধারণের পরিচালনার দায়িত্ব পাবে তারা পাবলিকের সাথে বাটপাড়ি কোরবে না?’
‘কারণ হ্যেরা তো দেখলো যে, পাবলিকের লগে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, ভাঁওতাবাজি, ফেরেববাজি, ছলচাতুরী কোরলে হয় পাবলিক তাগোরে ফুটা কোরবো নাইলে বুলডোজার দিয়া ঘরবাড়ি মাটির লগে মিশায়া দিবো, বাপের মাথার ওপর বাথরুম কোরবো।’
‘আমারো তাই মনে হয়, এবার যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে তারা নিশ্চয় আর চাঁদাবাজি করবে না, টাকা টাকা কোরে পাগোল হয়ে, বস্তা বস্তা টাকা খাটের নিচে রাখবে না। বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনবে না। হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার কোরবে না। গুম খুন কোরবে না, ইতিহাস থেকে নিশ্চয় শিক্ষা নিবে।’
‘ক্রশ ইয়োর ফিংগার বাড্। এইবার ইকটু ধৈর্য ধরেন, এইবার নিশ্চয় প্রকৃত ভালো প্রশাসন পামু যারা পাবলিকের লগে বাটপাড়ি কোরবো না।’
‘তাহোলে আমরা সবাই কোরাশে বোলবো; “আইসা দেখি ঘাটপাড়, বইসা আছে জনগণের সরকার, জনদরদি সরকার”।’
‘ইয়েয়য়য় গ্রেট, ঠিকই কোইছেন, এইবারের নির্বাচনের পর আমরা সব্বাই চিল্লায়া কমু, “আইসা দেখি ঘাটপাড়, জনগণের সরকার, জনদরদি সরকার। ইয়েয়য়য়য়য়য়য়য়য়”।’
লেখক: চলচ্চিত্রকার
মন্তব্য করুন