দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম ও বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী একটি উপজেলা বাঁশখালী। যার দূরত্ব চট্টগ্রাম শহর থেকে যথাক্রমে বাঁশখালী উপজেলা (৪৪ কিমি) এবং শেষ সীমান্ত বাঁশখালী টইটং (৫৮ কিমি)।
এ সড়কপথে প্রতিদিনই শত শত মানুষ চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা-যাওয়া করে। কেউ আসছে চিকিৎসার কাজে, কেউ আসছে ব্যবসায়িক কাজে আবার কেউবা আসছে পড়াশোনার কাজে কিংবা কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে। বাঁশখালীবাসীর চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের একমাত্র সড়কপথ আজ অনিয়মের জাঁতাকলে। এ অনিয়মের স্রোতে বাঁশখালীর যাত্রীসাধারণের জীবন যেন ভাসমান। নানাভাবে ধারাবাহিক সিরিয়ালের মতো প্রাণ ঝরছে এ সড়কে।
বাঁশখালীর এ প্রধান সড়কপথে গণপরিবহনের তালিকায় আছে—এস আলম পরিবহন সার্ভিস, বাঁশখালী সুপার ও স্পেশাল সার্ভিস। এ ছাড়া আছে সিএনজি (গ্যাসচালিত)। এদিকে বাঁশখালীর প্রধান সড়কের প্রশস্ততা নেই বললেই চলে। যেখানে সড়কের দুপাশের ফুটপাতগুলোও অসাধু দোকানিদের দখলে। যার বিরূপ প্রভাব প্রতিনিয়তই বাঁশখালীর এই প্রধান সড়কপথে পড়ে। এ ছাড়া এই সড়কপথের গণপরিবহন সেবা সিন্ডিকেটের দখলে। তাই বাঁশখালীর গণপরিবহনগুলো সড়কে দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের কাছে বাঁশখালীবাসীর জীবনের মূল্য যেন খুবই নগণ্য।
বাঁশখালী সড়কের শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রতিনিয়তই অকালে প্রাণ ঝরছে। এভাবেই যেন বাঁশখালীর হাজারো মায়ের কোল খালি হচ্ছে। বাঁশখালী সড়কের এ অনিয়ম ও শৃঙ্খলাজনিত কারণগুলো বেশ কয়েকবার জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হলেও, কোনো প্রতিকার হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট এ সড়কের রামদাশ মুন্সিরহাটসংলগ্ন নূরজাহান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বাস (সুপার সার্ভিস), মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার জন্ম হয়। এ দুর্ঘটনায় দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হয় এবং আরেকজন গুরুতর আহত হয়। ১৬ আগস্ট গুরুতর আহত ব্যক্তিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেঁচে থাকার যুদ্ধে হেরে যায়। এ ছাড়া চলতি বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালী নাপোড়া বাজারসংলগ্ন সড়কে বেপরোয়া এস আলম বাসের চাপায় অগ্ররাজ সিকদার নামে এক স্কুলছাত্র পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। বাঁশখালীর প্রধান সড়কে শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রতিনিয়তই প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। আর কত মায়ের বুক খালি হলে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাঁশখালীবাসী আজ দিশেহারা। এ অবস্থায় বাঁশখালীর প্রধান সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাঁশখালীর প্রধান সড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বাঁশখালীর প্রধান সড়কে নিরাপদ যাত্রার দ্বার উন্মোচিত এবং বাঁশখালীবাসীর সড়কপথে অকাল প্রাণহানির শঙ্কা দূর হবে।
এস এম রাহমান জিকু
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
কলেজ রোড, চকবাজার, চট্টগ্রাম
মন্তব্য করুন