নাহিদ নজরুল
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অবিচল ব্যক্তিত্ব ও আপসহীনতা

অবিচল ব্যক্তিত্ব ও আপসহীনতা

একান্তই হিংসায় প্রজ্বলিত হয়ে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে বাকশালী স্বৈরমানসিকতায় অভ্যস্ত যারা, তাদের একটি অংশ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে বেফাঁস, বেপরোয়া সমালোচনা করতে কাউকে দেখা যায়নি। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কেউ সৎ, মহৎ, গণতান্ত্রিক চেতনার না হলে রাজনৈতিকভাবে তার পক্ষে বিশালতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ব্যক্তির রাজনৈতিক যোগ্যতার মানদণ্ড তার ব্যক্তিগত ইমেজের বাইরে নয়। খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বলা যায়, গৃহকোণ থেকে রাজনীতিতে এসেছেন সময়ের প্রয়োজনে। সেই রাজনীতিও খুব শান্তিপ্রিয় পরিস্থিতির মধ্যে ছিল না। তিনি গৃহকোণ থেকে সরাসরি এসেছেন একেবারে রাজপথে, স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে। তার রাজনীতিতে আসার পথটা সত্যিকারেই ছিল সাহসী, ঝুঁকিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। তিনি জেনেশুনেই এসেছিলেন এই কঠিনতম বন্ধুর রাজনীতির উত্তাল মাঠে।

এক-দুই মাস, এক কিংবা দুই বছর নয়, সুদীর্ঘ আট বছর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রাখার পর শেষ পর্যন্ত এরশাদের পতন হয়। মুক্তি পায় গণতন্ত্র। সে আন্দোলনে বেগম জিয়ার রাজনীতির অধ্যায় ছিল জনগণ। আর সেই অধ্যায়ের সীমানা ছিল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, গোটা বাংলাদেশ। জনগণ থেকে প্রাপ্ত অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, সম্মান, সমর্থন, ভালোবাসা নিয়েই তিনি বিএনপিকে এমন উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন যে, বিএনপি আজ বাংলাদেশে গণমানুষের মাঝে সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তার নেতৃত্বের কারিশমা এতটাই সময়োপযোগী ও গ্রহণযোগ্য যে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি গণমানুষের যে আস্থা ও সমর্থন ছিল, তা তিনি মানুষের কাছে পুনঃস্থাপিত করতে পেরেছেন পরিপূর্ণভাবে। যারা বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়ে দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, বেগম জিয়া তার সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে ওইসব হিংসুকের ভ্রান্ত ধারণাকে চপেটাঘাত করে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে জনগণের আস্থানির্ভর, মাটি ও মানুষের দল হিসেবে দেশে পাকাপোক্ত অবস্থানে গড়তে সক্ষম হন। বিএনপি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে সারা দেশে শক্ত অবস্থান গঠনে বেগম জিয়ার ঐতিহাসিক অবস্থান আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে স্বীকৃত ও নন্দিত।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, ধৈর্য, সহনশীলতা এবং সুচিন্তিত চিন্তাভাবনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার সুদৃঢ় মনোবল ও মানসিকতা এবং অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তার অবিচল ব্যক্তিত্ব তাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপসহীন নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাজনীতিতে এমন মহিমান্বিত গুণাগুণ নিঃসন্দেহে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে রাজনীতির ইতিহাসে। দলীয় চেয়ারপারসন হিসেবে রাজপথের আন্দোলনে কিংবা দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় অথবা বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তিনি কখনো তার অবস্থানের বাইরে, তার সম্মান-মর্যাদার বাইরে কোনো বেফাঁস কথা উচ্চারণ করেছেন—এমন নজির নেই। তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার এক প্রামাণ্য দলিল। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ছোট-বড় অনেক দলের নেতাদের সঙ্গেই তিনি বৈঠক করেছেন, আলাপ-আলোচনা করেছেন; তারাও এ কথা স্বীকার করেন যে, খালেদা জিয়ার কথাবার্তা ও আচার-আচরণ অনেক মার্জিত ও পরিশীলিত এবং আভিজাত্যের সাক্ষ্য বহন করে। সস্তা, স্থূল এবং হাস্যকর কথা তিনি কখনো বলেননি। অবশ্যই এটি তার পারিবারিক শিক্ষা। তার এ গুণাবলি অবশ্যই আজকের প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয়।

ক্যান্টনমেন্টের যে বাড়িতে স্বামী, দুই ছেলে নিয়ে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন জীবনযাপন করেছেন, সেই বাড়ি থেকেই তাকে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করে দেয় হাসিনা সরকার। কান্নায় ভেঙে পড়েন বেগম জিয়া। কিন্তু কাউকে অভিশাপ দেননি, আক্ষেপ প্রকাশ করেননি। জেলখানায় থাকা অবস্থায় তার মায়ের মৃত্যু হয়, সেটাও হজম করেন। বালুভর্তি ট্রাক ব্যারিকেড দিয়ে অসুস্থ খালেদা জিয়ার বাড়ি যখন জিম্মি করে রাখা হয়, সে অবস্থায় তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু হয়। সেই পরিস্থিতিও নীরবে সহ্য করেছেন। এত অসুস্থতার পরেও বড় ছেলেকে দেখতে পাননি। এসব আরোপিত অত্যাচার, নির্যাতন সয়ে সয়ে তিনি সময়ের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ এক মহীয়সী নারী। তিনি বিএনপির মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন, তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এসব প্রাপ্তি ছাপিয়ে গেছে তার ব্যক্তিত্বের সার্বজনীনতা। তিনি আজ শুধু দলের নয়, গোটা দেশ ও জাতির অভিভাবক; আস্থার নির্ভরশীল আশ্রয়। একজন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা এসেছেন একজন আপসহীন, মহীয়সী ও মানবতার নেত্রীর প্রতি সম্মান জানাতে, তার সুস্থতা কামনা করতে। বাংলাদেশে খালেদা জিয়া এক অনিবার্য বাতিঘর; এক অমূল্য রাজনৈতিক পাথেয়। হে মহান আল্লাহতায়ালা, আপনি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে দিন।

লেখক: গীতিকার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন বছরে চমক দেখাতে প্রস্তুত বলিউড

টানা ৪২ ঘণ্টা গান গাইলেন স্যান্ডউইচ বিক্রেতা

প্যারিসে হাদি হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে সমাবেশ

হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন

এক আসনে মনোনয়ন কিনলেন আপন ২ ভাই

বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ 

আজ টানা ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

কুড়িগ্রামে শীতে জনজীবন স্থবির, তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি 

১০

ইরানের যে কোনো হামলার কঠোর জবাবের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

১১

আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ চাই: ড. এম এ কাইয়ুম

১২

যাত্রী ওঠানামা নিয়ে বিরোধ, চাচার হাতে ভাতিজা নিহত

১৩

ঢাকায় শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা 

১৪

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৫

বুধবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৬

রাজধানীতে ১৪ তলা ভবনে আগুন

১৭

২৩ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

তিন দিন করে রিমান্ডে দিপু হত্যার ১২ আসামি

১৯

বেরোবিতে হাদি-আবরারের নামে ভবনের নামকরণ করলেন শিক্ষার্থীরা

২০
X