মুফতি মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৩ এএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রোজায় পাপ বর্জনের অনুশীলন

রোজায় পাপ বর্জনের অনুশীলন

মানুষের দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের মাস রমজান। সংযম, সহিষ্ণুতা ও আত্মশুদ্ধির অনন্য চেতনায় ভাস্বর পবিত্র রমজান। মহানবী (সা.) এ মাসকে এক সুমহান মাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে রোজার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আমরা রোজার ফাজায়েল-মাসায়েল কমবেশি জানলেও রোজাকে পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত রাখার বিষয়টি অনেকেই জানি না বা জানলেও মেনে চলার চেষ্টা করি না।

হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অনেক রোজাদার এমন আছে যে, তাদের রোজা থেকে উপোস থাকা ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। আর অনেক রাত্রি জেগে ইবাদতকারী এমন আছে যে, তাদের সে ইবাদত থেকে রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। (মেশকাত: ১১৭)। যেসব কারণে আমাদের রোজা ত্রুটিযুক্ত হয় এবং সওয়াব কম হয় তার একটি হচ্ছে মিথ্যা বলা। অনেকে রোজা রেখেও অবলীলায় মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে সে রোজা ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা ও তার ওপর আমল করা পরিহার করল না, তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বোখারি: ১৯০৩)। মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ না করলে তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই এর ব্যাখ্যা হলো—রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোবাসনাকে পরিত্যাগ এবং কুমন্ত্রণা দানকারী আত্মাকে বশে আনা। অতএব রোজা রেখে যখন এর উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়নি তখন সেই রোজার পরোয়া আল্লাহ করেন না। অতএব, আল্লাহর প্রয়োজন না হওয়ার অর্থ দাঁড়াল, আল্লাহতায়ালা তার রোজার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং কবুল করেন না। (ফয়জুল কালাম: ৩৯৮)

মিথ্যা কথা বলা মারাত্মক বড় একটি গুনাহ। মিথ্যা ইসলামের দৃষ্টিতে অতি গর্হিত, অবশ্য-বর্জনীয়। মিথ্যাবাদিতা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মিথ্যাবাদীর শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা বাকারা: ১০-১২)। আল্লাহতায়ালা বলেন, মিথ্যা তো তারাই বানায় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের ওপর ইমান রাখে না। বস্তুত তারাই মিথ্যাবাদী। (সুরা নাহল: ১০৫)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘মিথ্যাবাদীদের ওপর অভিসম্পাত।’ (সুরা আলে ইমরান: ৬১)। আল্লাহতায়ালার লানত বা অভিশাপের চেয়ে বড় বিষয় আর কী হতে পারে! রোজা আসে জাহান্নাম থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে। অথচ মিথ্যা বলে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায় মানুষ। মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা হচ্ছে শুভ কাজ। আর শুভ কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। বান্দা যখন সত্য বলতে থাকে, একসময় আল্লাহর কাছে সে সত্যবাদী হিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা হচ্ছে পাপাচার, পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, বান্দা যখন মিথ্যা বলতে থাকে, আল্লাহর কাছে একসময় সে মিথ্যুক হিসেবে গণ্য হয়। (বোখারি: ৫৭৪৩)। রোজাকে ত্রুটিমুক্ত করে আল্লাহর দরবারে কবুলযোগ্য করতে এই মাহে রমজানে মিথ্যা বলা থেকে বাঁচতে হবে। রোজা রেখে গালমন্দ ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা যাবে না। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কারও সিয়ামের দিন হবে, সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে ও হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালাগালি করে অথবা তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে যে, ‘আমি সিয়াম পালনকারী।’ (বোখারি: ১৯০৪)। অন্য হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়। সিয়াম তো অসার, বাজে ও অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকার নাম। যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় অথবা তোমার সঙ্গে কেউ মূর্খতাসুলভ আচরণ করে তবে তাকে বলো, ‘আমি রোজাদার, আমি রোজা রেখেছি।’ (মুসতাদরাকে হাকেম: ১৫৭০)। যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, গিবত করার মতো অপরাধ থেকে বিরত হয় না, তার রোজা রোজা নয় বরং উপবাস থাকা। সে রোজার কোনো সওয়াব পায় না, তবে ফরজ আদায় হয়ে যায়। শুধু পানাহার বর্জন করার নামই রোজা নয়। আলেমরা বলেন, রোজা তিন প্রকার—১. সাধারণের রোজা: তারা শুধু পানাহার ও স্ত্রীগমন থেকেই বিরত থাকে। ২. বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রোজা: তারা শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয় শক্তিগুলোকে সব ধরনের আনন্দ উপভোগ, হারাম-মাকরুহ এবং মনোবাসনা পূরণ থেকে বিরত রাখে এবং কুমন্ত্রণা দানকারী আত্মা দমন করার সব পথ অবলম্বন করে। ৩. সর্বোচ্চ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রোজা: তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে বিরত থাকে। (ফয়জুল কালাম: ৩৯৮)। মিথ্যা, গিবত, পরনিন্দা ইত্যাদি যাবতীয় গর্হিত কাজ পরিত্যাগ করে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজা রাখার তাওফিক দান করুন।

লেখক: ইমাম ও খতিব

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

জকসু নির্বাচন / একই পদে শিবির-ছাত্রদল প্যানেল থেকে দুই জুলাই যোদ্ধা

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ 

ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পেলেন সাংবাদিক সোহেল

জামায়াত-এনসিপিসহ ৭ দলের সঙ্গে ইসির বৈঠক শুরু

​​​​​​​এপস্টাইন ফাইলস প্রকাশের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস

অষ্টম শ্রেণির বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়ল 

শততম টেস্ট খেলতে নেমে সংবর্ধনা পেলেন মুশফিক

কমনওয়েলথ রচনা প্রতিযোগিতায় সিলভার অ্যাওয়ার্ড পেল ঔড়ব আজাদ

সৌদি আরবকে বন্ধু ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

১০

আজ থেকে নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি শুরু, ভরি কত

১১

১৪ ডিগ্রির ঘরে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, আসছে শৈত্যপ্রবাহ 

১২

ডায়েট সোডা কি সত্যিই নিরাপদ? গবেষণার ফল যা জানাচ্ছে

১৩

পর্দায় নরেন্দ্র মোদির ‘মা’ হচ্ছেন রাবিনা ট্যান্ডন

১৪

‘খুদে মেসি’ সোহান এখন স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায়

১৫

নির্বাচনে আ.লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে ডাচ মন্ত্রীকে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

১৬

মুশফিকের শততম টেস্টে সাকিবের আবেগঘন বার্তা

১৭

পেনাল্টি মিসে বছরের শেষ ম্যাচ জিততে পারল না ব্রাজিল

১৮

এটা তোমার জয় নয়, অভিশপ্ত জীবনের শুরু: জিতু কামাল

১৯

মুশফিকের শততম টেস্টে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে দুই পরিবর্তন

২০
X