তীব্র তাপে পুড়ছে দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন। চলমান তাপপ্রবাহে এরই মধ্যে দেশের চার জেলায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। স্বস্তির বৃষ্টিই যখন মানুষের একমাত্র প্রতীক্ষা, তখন আবহাওয়াবিদেরও নিরুপায় নিরসবদনে বলতে হচ্ছে, প্রকৃতির এ রোষানল চলবে আরও কয়েক দিন। এ অবস্থায় সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে সুস্থ থাকার জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। যদিও সব শ্রেণির মানুষের সব রকমের সতর্কতা অবলম্বনের বাস্তবতা নেই, তবে তাদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি আনতে সমাজে সচ্ছলরা অবশ্যই ভূমিকা রাখতে পারেন।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়িয়ে গেছে যশোর, পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাপপ্রবাহে গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন। ঝলসে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল। রোদে শুকিয়ে ঝরচ্ছে আম-লিচু। মানুষের দুর্ভোগের সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগী। দেশজুড়ে এমন পরিস্থিতিতে সব স্কুল-কলেজে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োচিত ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। চলতি মৌসুমে শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। ১৯৯৫ ও ২০০২ সালেও সমান তাপমাত্রা উঠেছিল, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখা শুরুর পর এটিই সর্বোচ্চ।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে। তবে এ মাসে বড় পরিসরে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। আগামী মে মাসও উত্তপ্ত মাস হিসেবে বিবেচিত হবে। মে’তেও তীব্র গরম থাকবে। সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠতে পারে তাপমাত্রা। রাজধানীতে গত দুই দশকে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দায়ী যে বিশাল জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট এবং গাছপালা নিধনের পাশাপাশি শহরের সবুজ মাঠ, খোলা জায়গা ও পুকুর খাল ধ্বংস—এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও তাই মনে করি। আবার বৃহৎ পরিসরে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এ অবস্থার জন্য দায়ী, এ কথা সত্য। তাই বলে কি আমরা প্রকৃতি অনিষ্টকারী কর্মকাণ্ড বৃক্ষনিধন, নদী-পুকুর-জলাশয়ের ধ্বংস চালিয়ে যেতে পারি? এসব অবশ্যই ভাবতে হবে।
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। চাইলেও ঘরে বসে বিশ্রাম নেওয়ার আর্থিক সংগতি বা নিরাপত্তা তাদের নেই। এদিকটা বিবেচনা করে সবার উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে সচ্ছল মানুষের সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত, যা শ্রমজীবী মানুষের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। আর জেলা-উপজেলা এবং গ্রামগঞ্জে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানদের উচিত শ্রমজীবীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা, যেমনটা শীতকালে মানুষ বিভিন্নভাবে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। তীব্র তাপপ্রবাহে হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প আপাতত নেই।