কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ০২:৪২ এএম
আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ০৭:৪০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

মাসতুতো ভাই

মাসতুতো ভাই

‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ বহুল পরিচিত বাংলা প্রবাদটির অর্থ—অন্যায় কাজে সায় দেওয়া কিংবা অন্যায়কারীর পক্ষ অবলম্বন করে তার সহযোগী হওয়া। প্রবাদটির উৎসের গল্প অনুযায়ী, সাধারণত দুই চোর অথবা চোরের দুই দলের মধ্যে চুরির মাল ভাগাভাগির উদ্দেশ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো। ঐকমত্য কেন? কারণ এক চোরের হাতে আরেক চোর ধরা পড়লে ভাগবাটোয়ারায় সম্মত না হয়ে উপায় কি! কিন্তু রোববার কালবেলায় প্রকাশিত মাদক কারবার-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে প্রবাদের অর্থের দিকটা মিল থাকলেও বদলেছে মাসতুতো ভাইয়েদের সম্পর্কটা। চোরে চোরে নয়, ‘মাসতুতো ভাই’ হয়েছে চোর আর পুলিশ বা মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা! অর্থাৎ চোর গোত্রের না হয়েও চুরি বা অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত হয়ে এ মাসতুতো ভাইরা রাজধানীতে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদকসহ নানা অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজধানীর অভিজাত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী এলাকায় বিভিন্ন রকমের মাদকের ব্যবহার এবং বৈধ বারের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। কিন্তু তার চেয়ে ভয়াবহ ও হতাশার বিষয় হচ্ছে, এসব কর্মকাণ্ড চলছে প্রশাসন বা খোদ মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তার ইশারায়। অথচ মাদক নিয়ন্ত্রণে এই এলাকায়ও সক্রিয় বিশেষায়িত সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসব এলাকায় রাত হলেই বিভিন্ন জায়াগায় বসে মদ, ইয়াবা ও সিসার আসর। দেশি-বিদেশি মডেলসহ তরুণ-তরুণীদের উদ্দাম নৃত্যে জমে ওঠে আসর। বিভিন্ন হোটেলে ডিজে পার্টির এক আয়োজকের সঙ্গে এ অধিদপ্তরের গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক সুমনুর রহমানের একটি অডিও রেকর্ড এখন কালবেলার হাতে। এতে মাদকের ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সিসা লাউঞ্জ, ডিজে পার্টি থেকে ঘুষ নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ ছাড়া তিনি নিজেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোহারা দেন এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েই গুলশান জোনে এসেছেন বলেও জানা যায়। টাকার বিনিময়ে এসব চালিয়ে যাওয়ার অনুমতিসহ লেনদেন ঠিকঠাক রাখলে এসব কারবারে কেউ বাধা দিতে পারবে না—এমন আশ্বস্ত করেন অডিও বার্তায়! সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের মতো হুমকিসহ অনৈতিকভাবে ও আইন ভঙ্গ করে বলা হয়, ‘তোমরা ব্যবসা করো, তুমি ১০ টাকা ইনকাম করো আমারে একটা টাকা দাও, দুইডা টাকা দাও। এই ইনকামডা তো অবৈধ। নাইলে আমি ডিস্টার্ব করব।’ এমনকি শর্তসাপেক্ষে মাদক বিক্রির যে অনুমোদন দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, তা থেকেও এ পরিদর্শক মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রতিটি লাইসেন্সে নেন ৫ লাখ করে।

আমরা মনে করি, মাদকসহ এসব অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজের বিকাশে বিশেষভাবে অন্তরায় ও সর্বগ্রাসী—এ কথা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া এসব প্রচলিত আইনবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড ও দণ্ডনীয় অপরাধ আর এসবে লিপ্ত খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক! এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাবের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্সের নীতির কথা অজানা নয়। শুধু কথায় নয়, এ নীতি বাস্তবায়ন জরুরি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এসব নিয়ন্ত্রণ বা এ থেকে সমাজকে রক্ষার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারাই যদি হয় নীতিহীন, দুরাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ, তা বেদনার। সততা-নীতি-আদর্শের এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, সমাজ যাবে রসাতলে। আমাদের চাওয়া, এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করা হবে এবং জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেউ ছাই দেওয়া হাত থেকে বের হতে পারবে না : উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

বাংলাদেশে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

১০

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

১১

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

১২

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১৩

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১৪

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১৫

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৬

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

১৭

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৮

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১৯

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

২০
X