ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে শহুরে মানুষ। ঈদে ঘরমুখো মানুষ প্রতি বছরই দুর্ভোগের শিকার হয়। আগামী কয়েক দিন সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকবে। কয়েক দিন ধরে গরমে এমনিতেই মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থায় মহাসড়কে যানজট
সৃষ্টি হলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। কাজেই মহাসড়কে যাতে যানজটের কারণে মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গরমের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম ভর্তি মানুষ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসার পর ট্রেনগুলো আবার ছেড়ে যায়। এখন ওইদিক থেকে যদি কোনো ট্রেন দেরিতে আসে, তাহলে ট্রেনগুলো এখান থেকেও দেরিতে ছেড়ে যায়। ট্রেনগুলো ঢাকায় আসার পর ক্লিনিং ওয়াটারিং করা হয়। এজন্য প্রতিটি ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। তবে শুক্রবার থেকে শিডিউল বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সদরঘাটে ঢাকা নদীবন্দরে নৌপথেও বেড়েছে যাত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আগের চেয়ে যানবাহনের যাতায়াত অনেক বেশি। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে দেশের নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতেও। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না। ওভার স্পিডে গাড়ি না চালাতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভার টেকিং না করতে বাসচালকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করা যাবে না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সড়ক, রেল এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি টাকা নিলে ও লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রতি বছরই ওঠে। এ বছর কেউ যাতে যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া
আদায় করতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দের উপলক্ষ হলেও প্রতি বছর পথের নানা ভোগান্তি এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণে তা কোনো কোনো পরিবারের জন্য যেভাবে নিরানন্দ বয়ে আনে, সেটি দুর্ভাগ্যজনক। বছরে দুবার অনুষ্ঠিত ঈদে যাতে সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলে যেতে পারে, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বস্তুত সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনা, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাড়তি আয়োজন গ্রহণের মাধ্যমে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব সবার জন্যই আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈদযাত্রায় সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে পারে। কারও আনন্দের ঈদযাত্রা যাতে বিষাদে পরিণত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাই সজাগ থাকবেন আশা করি। সবার ঈদযাত্রা আনন্দময় হোক।