স্বকৃত নোমান
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:১৯ এএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলা ও বাঙালি, সংস্কৃতি ও সদাচার

বাংলা ও বাঙালি, সংস্কৃতি ও সদাচার

সংস্কৃতির সঙ্গে সদাচারের সম্পর্ক নিবিড়।

সদাচার হচ্ছে শুদ্ধ আচার, সদ্ব্যবহার। সভ্যতা ও সদাচার শব্দ দুটি প্রায় একই অর্থবোধক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “সিভিলিজেশন, যাকে আমরা সভ্যতা নাম দিয়ে তর্জমা করেছি তার যথার্থ প্রতিশব্দ আমাদের ভাষায় পাওয়া সহজ নয়। এই সভ্যতার যে-রূপ আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল মনু তাকে বলেছেন সদাচার। অর্থাৎ, তা কতকগুলি সামাজিক নিয়মের বন্ধন। এই নিয়মগুলির সম্বন্ধে প্রাচীনকালে যে ধারণা ছিল সেও একটি সংকীর্ণ ভূগোলখণ্ডের মধ্যে বদ্ধ। সরস্বতী ও দৃশদ্বতী নদীর মধ্যবর্তী যে দেশ ব্রহ্মাবর্ত নামে বিখ্যাত ছিল, সেই দেশে যে আচার পারম্পর্যক্রমে চলে এসেছে তাকেই বলে সদাচার। অর্থাৎ, এই আচারের ভিত্তি প্রথার উপরেই প্রতিষ্ঠিত—তার মধ্যে যত নিষ্ঠুরতা, যত অবিচারই থাক। এই কারণে প্রচলিত সংস্কার আমাদের আচারব্যবহারকেই প্রাধান্য দিয়ে চিত্তের স্বাধীনতা নির্বিচারে অপহরণ করেছিল। সদাচারের যে-আদর্শ একদা মনু ব্রহ্মাবর্তে প্রতিষ্ঠিত দেখেছিলেন সেই আদর্শ ক্রমশ লোকাচারকে আশ্রয় করলে।”

রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য অনুযায়ী কতগুলো আদর্শের সমষ্টিই হচ্ছে আসলে সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতি মানেই সদাচার। বাংলায় যা সদাচার ইংরেজিতে তা সিভিলাইজেশন, অর্থাৎ সভ্যতা। বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে সদাচারের শিক্ষা একেবারে কম নয়। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি সংস্কৃতিতে ছিল সদাচার, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঔদার্য। বাংলার মুসলমানদের প্রধান অংশ প্রাক্তন হিন্দু ছিল বলে দেশের মূল জনসমাজ তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জীবনধারণ পদ্ধতির সঙ্গে তাদের তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। স্বভাবতই দুই ধর্মের মধ্যে প্রভেদ থাকলেও হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল পারস্পরিক সমঝোতা, সদাচার ও আদান-প্রদানের মনোভাব। কিছু ক্ষতি স্বীকার করে হলেও মুসলমানরা সবসময় হিন্দুদের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ছিল সামাজিক ও সদাচারের সম্পর্ক। হিন্দুরা তাদের সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানাদিতে মুসলমানদের নিমন্ত্রণ করত এবং মুসলমানরাও হিন্দুদের আনন্দ-উৎসবে সানন্দে যোগ দিত। হিন্দুরা মুসলমানদের তাদের উৎসবাদি উপলক্ষে উপহার-উপঢৌকন দিত। মুসলমানরাও তাদের সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানাদিতে হিন্দুদের আমন্ত্রণ জানাত। উচ্চশ্রেণির হিন্দুরা মুসলমানদের জন্মদিন, বিয়েশাদি ইত্যাদি উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন, পীর-দরবেশদের প্রতি ছিল হিন্দুদের ভক্তি-শ্রদ্ধা। মুসলমান পীর-দরবেশদের দরগাহ বা মাজারগুলোতে হিন্দুরাও শিরনি দিত, চাদর চাপাত এবং বাতাসা বিতরণ করত। হিন্দু-মুসলমানের এ সদাচার প্রতিফলিত হয়েছে মৈমনসিংহ গীতিকার ‘মলুয়া’ পালায় :

হেঁদু আর মুসলমান একই পিণ্ডের দড়ি।

কেহ বলে আল্লাহ আর কেহ বলে হরি

বিছমিল্লা আর ছিরিবিষ্টু একই কায়ান।

দো যাঁকে করি দিয়ে পরভু রাম রহিম

মরমি সাধক, ভক্ত, পীর-দরবেশ, আউল-বাউল ও কবিদের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তথা মানুষে মানুষে সদাচারের মনোভাব গড়ে উঠেছিল, যার ফলে গড়ে উঠেছিল হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য। তখন বাংলার সমাজ ছিল বহুত্ববাদী, অর্থাৎ বহু সংস্কৃতির চর্চাক্ষেত্র। বিশ শতকের শুরুতেও বাংলাদেশে একটি মিশ্র সামাজিক এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজ করত। হিন্দু-মুসলমানের জীবনযাত্রার মধ্যে কিছু কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও তারা মূলত একটি জাতিগোষ্ঠীই ছিল এবং সেই জাতির নাম বাঙালি। ঐহিক কারণে উভয়ের মধ্যে বিবাদ ঘটলেও উপাসনা-আরাধনার কারণে বিবাদ কখনো ঘটত না। হিন্দু-মুসলমানের এ সদাচারী মনোভাবের ক্ষেত্র গড়ে তোলা ও লালন করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন সুফি তথা পীর-দরবেশরা। তারা বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন সদাচার।

ওপরে বাঙালি সংস্কৃতির যেসব অনুষঙ্গ উল্লেখ করা হলো, অধিকাংশের মধ্যেই রয়েছে একটি বিশেষ গুণ, সদাচার। বাংলা গানের মধ্যে তো সদাচার একটি বড় স্থান দখল করে আছে। লালন সাঁই, হাছন রাজা, রাধারমণ দত্ত, জালাল উদ্দীন খাঁ, বিজয় সরকার, শাহ আবদুল করিম প্রমুখ ভাব ও সংগীত-সাধকরা তাদের গানের মধ্যে সদাচারকে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান। লালন সাঁই দিয়েছেন মানুষকে সদাচারী হওয়ার মন্ত্রণা : ‘মানুষ হয়ে মানুষ চেনো/মানুষ হয়ে মানুষ মানো/মানুষ রতনধন/করো সেই মানুষের অন্বেষণ।’ মরমি সাধক শাহ আবদুল করিমও তার গানে বলেছেন মানুষে মানুষে সদাচারের কথা : ‘এইসব নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন/কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান/তুমিও মানুষ আমিও মানুষ/সবাই এক মায়ের সন্তান।’ জালাল উদ্দীন খাঁ তার গানে বলেছেন : ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ শোন বলিরে পাগল মন/মানুষের ভিতরে মানুষ করিতেছে বিরাজন।’ বাংলা গানে সদাচার ও সম্প্রীতির এমন বিস্তর উদাহরণ দেওয়া সম্ভব।

একদা গ্রামবাংলায় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো, এখনো হয়। প্রত্যেক যাত্রাপালায় বিবেকের ভূমিকায় অভিনয় করে একজন। বিবেক চরিত্রটি দর্শকদের দেয় সদাচারের শিক্ষা। বর্তমানের পালাগানগুলোতে বাউল তথা পালাকাররা পালাগানের মধ্য দিয়ে মানুষকে সদাচারের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতিতেও রয়েছে সদাচার। এ জাতির মধ্যে প্রচলিত খেলাধুলার প্রত্যেকটির মধ্যে রয়েছে সদাচারের উপাদান। খেলাধুলা মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতিতে এমন কোনো ক্রীড়া নেই, যা নিষ্ঠুর। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে গ্ল্যাডিয়েটররা হাজার হাজার দর্শকের সামনে যুদ্ধ করত, খুনোখুনি করত আর সেই খুনোখুনি দেখে আনন্দ উপভোগ করত দর্শকরা। বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতিতে এমন নিষ্ঠুর ক্রীড়া কোনোকালেই ছিল না, এখনো নেই।

বাঙালির উৎসব-অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিহিত রয়েছে সদাচার। যেমন পহেলা বৈশাখ। এটি বাঙালির জাতীয় উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একই হৃদয়াবেগে এক মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এ সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরূক হয়ে নাচে-গানে, মেলায়, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা। একইভাবে চৈত্রসংক্রান্তি, নবান্ন উৎসব, বিয়ে, গায়েহলুদ, স্নান উৎসব, জন্মদিন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শারদীয় দুর্গোৎসব বা দীপাবলির মতো উৎসবগুলোর মধ্যেও নিহিত রয়েছে সদাচার।

মানুষের মধ্যে সদাচার গুণটি থাকা আবশ্যক। নইলে মানুষ ও পশুর মধ্যে কোনো ফারাক থাকে না। পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্ম সদাচারের কথাই বলেছে, মানুষকে সদাচারী গুণাসম্পন্ন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে সদাচারকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্ব। এ গুণটি মানুষকে সুখী করে। এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে সৃষ্টি হয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি। পরিবারে এ গুণের ঘাটতি থাকলে স্বামী-স্ত্রীতে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, বোনে-বোনে কলহ বাধে। সমাজে সদাচার না থাকলে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। বাড়ে অশান্তি, হানাহানি। রাষ্ট্রে সদাচার না থাকলে নাগরিকদের মধ্যে তৈরি হয় বৈষম্য। প্রশাসনে সদাচার না থাকলে কর্মযজ্ঞে সৃষ্টি হয় শৈথিল্য, কর্মকর্তাদের মধ্যে তৈরি হয় প্রভুসুলভ মনোভাব। রাজনীতিতে সদাচারের চর্চা না থাকলে, রাজনীতিকরা সদাচারী না হলে জনগণ সদাচারী গুণসম্পন্ন হয়ে ওঠে না আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাধে সংঘাত ও সংঘর্ষ।

অসদাচরণের কারণেই পৃথিবীতে এত অশান্তি, সংঘাত, সংঘর্ষ। ট্রয়ের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল হেলেনকে অপহরণের কারণে। অর্থাৎ নারীর প্রতি অসদাচরণের কারণে। সীতার প্রতি অসদাচরণের কারণেই বিনাশ হয়েছিল লঙ্কেশ রাবণের। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার বহু কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ ছিল অসদাচরণ। দুর্যোধন কূলবধূ দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে অসদাচরণ করেছিলেন। দ্রৌপদীও ইন্দ্রপস্থে দুর্যোধনকে ‘অন্ধের পুত্র অন্ধ’ বলে অসদাচরণ করেছিলেন। গীতার বিষাদ যোগ অধ্যায়ে দেখতে পাই, পিতামহ ভীষ্মদেব ও কৌরবপক্ষের বীরেরা যখন করুক্ষেত্রে শঙ্খ বাজাচ্ছিলেন, তখন পাণ্ডবদের বুক ভয়ে কেঁপে ওঠেনি; কিন্তু পাণ্ডবদের শঙ্খনাদে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছিল ভয়ে। ‘স ঘোষো ধার্তরাষ্ট্রণাং হ্নদয়ানি ব্যদারয়ৎ/ নভশ্চ পৃথিবীং চৈব তুমুলোহভ্যনুনাদয়ন্’। অর্থাৎ শঙ্খ-নিনাদের সেই প্রচণ্ড শব্দ আকাশ ও পৃথিবী প্রতিধ্বনিত করে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের হৃদয় বিদারিত করতে লাগল। পাণ্ডবদের মনে কোনো ভয় ছিল না, কারণ তারা ছিলেন সদাচারী। সদাচারী ব্যক্তির মনে কোনো ভয় থাকে না, চরম বিপদেও তিনি থাকেন অবিচলিত।

সদাচারী বা সভ্য নাগরিক গড়ে তোলার দায় পরিবারের যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রেরও। সদাচারী নাগরিক গড়ে না তুললে যে কোনো মুহূর্তে রসাতলের দিকে ধাবিত হতে পারে দেশ। সদাচারী নাগরিক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও রাজনীতির সম-উন্নয়ন। ইতিপূর্বে সংস্কৃতির যে অনুষঙ্গগুলোকে চিত্তসংস্কৃতি বলে অবহিত করেছি, সেই অনুষঙ্গগুলোর চর্চায় মানুষের শুভসত্তার বিকাশ ঘটে। নাচ-গান-নাটক-সিনেমা-থিয়েটার-যাত্রাপালা-বই—এগুলো হচ্ছে বিবেকের খাবার। এ খাবারের মাধ্যমে সজীব থাকে বিবেক। জাগ্রত হয় শুভবোধ, সদাচার। সংস্কৃতি দমিয়ে রাখে ব্যক্তির অশুভসত্তাকে। যে মানুষটি গান করে, নাটক করে, বই পড়ে, সাহিত্যকর্ম করে, তার পক্ষে ধর্ষণ করা অসম্ভব, খুন করা অসম্ভব। অন্যের ক্ষতি করতে গেলে একটু হলেও তার বুক কাঁপবে, হাত কাঁপবে। দুর্নীতি করতে গেলে তার বিবেক বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাকে অনুতাপে দগ্ধ করবে। যখনই সে কোনো খারাপ কাজ করতে উদ্যত হবে, তখনই তার সামনে দাঁড়িয়ে যাবে বিবেক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ যে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তার অন্যতম কারণ আমাদের মধ্যে সদাচারের চর্চা। পাকিস্তানে এখন কী হচ্ছে? জনসভায় বোমা হামলায় মানুষ মরছে, মসজিদে বোমা হামলায় মানুষ মরছে। আফগানিস্তানে কী দেখছি আমরা? সদাচারের অভাবে সে দেশে তৈরি হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়। সদাচারের অভাবে প্রতিবেশী মিয়ানমার মুক্তি পাচ্ছে না আভ্যন্তরীণ কলহ থেকে। প্রতিবেশী এ তিনটি দেশের সঙ্গে তুলনা করলে সদাচারে নিঃসন্দেহে বাঙালিকে এগিয়ে রাখতে হবে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে বাঙালি সংস্কৃতিতে ভাঙা-গড়া চলছে, গ্রহণ-বর্জন চলছে। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বাঙালি সংস্কৃতি থেকে সদাচার, সম্প্রীতি, উদারতা, সহিষ্ণুতার মতো সদাচারের গুণগুলো লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি তা মনে করি না। সংস্কৃতি অপরিবর্তনীয় নয়। সংস্কৃতি নিশ্চল, অনড়, অটল নয়। সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে একইরকম থাকে না। তার পরিবর্তন আছে। গুণীজনরা বলেন, সংস্কৃতি নদীর মতো। নদী যেমন গতিপথ বদলায়, সংস্কৃতিও তার গতিপথ বদল করে। আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতিরও পরিবর্তন সাধিত হয়। পৃথিবীর সব জাতি-গোষ্ঠীর সংস্কৃতিই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। বাঙালি সংস্কৃতিও সেই পরিবর্তনের বাইরে নয়। শতবছর আগের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আজকের বাঙালি সংস্কৃতির বহু অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে।

বাঙালি সংস্কৃতির রয়েছে একটা নিজস্ব শক্তি। বাঙালি এখনো কাঁদতে পারে। কোনো একটা ভাবের কথা শুনলে তার চিত্ত বিগলিত হয়ে ওঠে। বাঙালি এখনো গান গায়, শোনে। বাঙালি এখনো ধর্মের নামে অধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে। বাঙালির এ নিজস্ব সাংস্কৃতিক শক্তিই তাকে সব অসদাচার থেকে মুক্ত রাখবে বলে আমাদের আশাবাদ।

তার মানে এই নয় যে, আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলব। সম্প্রতি আমরা দেশকে সংস্কৃতিশূন্য করার অপচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। বাঙালিত্ব-বিরোধী একটি অপশক্তি বাঙালি সংস্কৃতির সব অনুষঙ্গকে মুছে দিতে চাইছে। এরা বাঙালির চিরকালীন শত্রু। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের আস্ফালন ও দুষ্কর্ম এ জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

বাঙালি জাতিকে আরও সভ্য তথা সদাচারী করে তোলার জন্য প্রয়োজন সংস্কৃতিযুক্ত শিক্ষা প্রদান এবং সংস্কৃতিচর্চায় বিশেষভাবে আগ্রহী করে তোলা। শিক্ষার সঙ্গে থাকতে হবে সংস্কৃতির যোগ। তাহলেই ব্যক্তি হয়ে উঠবে সদাচারী, সভ্য, সংবেদনশীল, উদার ও সহিষ্ণু। আর তখন বাঙালি হয়ে উঠবে পরিপূর্ণভাবে একটি সদাচারী সুসভ্য জাতি।

রিকশাচিত্র: গাফফার, সামদানি ডটকম

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বললেন জয়সওয়াল

নদীর কিনারায় মিলল ২৩ কেজির কোরাল

একযোগে বাড়ল স্বর্ণ রুপা প্লাটিনামের দাম

সিরিয়ার হোমস প্রদেশে মসজিদে বিস্ফোরণ

মা-মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

বিপিএলের উদ্বোধনীতে ট্রফি না থাকায় প্রশ্ন, ব্যাখ্যা দিলো বিসিবি

তারেক রহমানের সংবর্ধনাস্থল থেকে ১৪৮ টন বর্জ্য সরানো হয়েছে : ডিএনসিসি

সাবেক মন্ত্রীর ‘এপিএসের’ ইন্ধনে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন

ফুলকপি খেলে কি আসলেই পেট ফাঁপে?

আসন্ন নির্বাচনে এককভাবে লড়বে জেএসডি

১০

ছাত্রশিবিরের নতুন সেক্রেটারি সিবগাতুল্লাহ সিবগা

১১

শান্তর শতকে উদ্বোধনী ম্যাচে রাজশাহীর দাপুটে জয়

১২

শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৩

ইনকিলাব মঞ্চের শাহবাগে অবস্থান, উপদেষ্টাদের আলটিমেটাম

১৪

পুকুরে মিলল নবজাতকের মরদেহ

১৫

লাখো পর্যটকে মুখর কক্সবাজার

১৬

গুলিস্তানে খদ্দর বাজার কমপ্লেক্সে আগুন

১৭

২০২৫ সালে অনলাইনে সবচেয়ে বেশিবার সার্চ হওয়া ক্রীড়াবিদ

১৮

৫ ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে যা জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

১৯

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া করলেন হেফাজত আমির

২০
X