

খুলনায় বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছিলেন অন্যতম। ৪৬ বছরের বিএনপির রাজনীতির ৩০ বছরই ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ছিলেন খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্র থেকে করা আহ্বায়ক কমিটিতে তাকে বাদ দেওয়া হয়। পরপর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি পান। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও।
নগরীর প্রতিটি ইউনিটের কমিটি থেকে মঞ্জু অনুসারীদের বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়। এতকিছুর পরও দমে না গিয়ে চালিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মসূচি। কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি তার অনুসারীদের নিয়ে আলাদা পালন করেছেন। চার বছর পর এর ফলও পেয়েছেন।
কোনো পদে না থেকেও ডাক পেয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সোমবার (২৭ অক্টোবর) গুলশানে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের। এতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হঠাৎ সরব হয়ে উঠেছেন মঞ্জুর অনুসারীরা।
খুলনা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সম্পর্ক ৪৬ বছরের। ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৮৭ সাল থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। ১৯৯২ থেকে ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। দীর্ঘ চার দশক ধরে খুলনা বিএনপি এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেমন সমার্থক হয়ে ছিলেন। অবশ্য তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও নিজের লোকদের সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিপক্ষের।
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ছন্দপতন ঘটে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। ২৫ ডিসেম্বর তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মঞ্জুর চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের এমন পরিণতি মানতে পারেননি অনুসারীরা। এক দিন পর থেকেই শুরু হয় গণপদত্যাগ। কিছুদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। এর মধ্যে খুলনা মহানগর বিএনপি, পাঁচ থানা ও ৩১টি ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সব জায়গা থেকেই মঞ্জু অনুসারীরা বাদ পড়েন।
বাদ পড়ার ছয় মাস পরই রাজনীতিতে কর্মসূচিতে সরব হন মঞ্জু। কেন্দ্রীয় বড় কর্মসূচির প্রতিটিতেই পৃথক ব্যানার ও মিছিল নিয়ে যোগ দেন মঞ্জুসহ তার অনুসারীরা। জাতীয় দিবসগুলো বড় পরিসরে পালন করেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ চায় তার (মঞ্জু) মতো যোগ্য ও দক্ষ সংগঠক দলকে নেতৃত্ব দিক। কিংবা জনগণের কাছে বিশ্বস্ত মানুষ হিসেবে তিনি তাদের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক।’
সার্বিক বিষয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমি কখনোই দলের বাইরে যাইনি। এক দিনের জন্যও দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি প্রতিটি প্রোগ্রামে খুলনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পকেটের টাকা খরচ করে আমার সঙ্গে থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। কোনো ধরনের পদপদবি ছাড়াই বিপুল নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থেকে বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তারাই বিএনপির ত্যাগী কর্মী। কারণ তাদের কোনো ধরনের পদ ছিল না; চাওয়া-পাওয়া ছিল না। শুধু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বৈঠকে আমাকে ডাকার কারণে খুলনা বিএনপিতে অন্যরকম আলোচনা হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিএনপিতে প্রাণ ফিরে এসেছে। আমি আগের মতো দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি।’
মন্তব্য করুন