‘শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম’ বা ‘দ্য বোট’—এক ছাতার নিচে থাকার কথা ছিল ক্রিকেট, দাবা, জুডো, ভারোত্তোলন, কারাতে, বিলিয়ার্ড-স্নুকার ইনডোর গেমসের জন্য স্থান। তবে পরিস্থিতি বদলাতেই বদলে গেছে অনেক কিছু। প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামটিতে সরকারের সেই প্রস্তাবে বিসিবির ভেতর থেকে শুরুতেই উঠেছিল আপত্তি। তারপরও বিকল্প স্থান সংকুলানের আশ্বাসে চুপসে গিয়েছিল সেই পাঁচ ফেডারেশনও। তবে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন ও ‘দ্য বোট’ স্টেডিয়ামের নাম-নকশা বিতর্কের পর এখন চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালেও। ইনডোর গেমসগুলোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় আছে ফেডারেশনগুলো। খাতা-কলমে ‘দ্য বোট’ স্টেডিয়ামের কাজের অগ্রগতি কিছুটা দৃশ্যমান হলেও বাস্তবে সেটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। অস্ট্রেলিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পপুলাসের সঙ্গে ৪৮ মাসের মধ্যে স্টেডিয়াম হস্তান্তরের চুক্তি করেছিল বিসিবি। ২৩ মাস পেরিয়ে গেলেও মূল কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি এখনো। আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সংস্কার আন্দোলনে বদলে গেছে বিসিবির নেতৃত্ব। সংস্কারের দাবি উঠেছে বোর্ডের কার্যক্রম ও স্টেডিয়াম নির্মাণেও। পাঁচ ফেডারেশনের স্থায়ী ব্যবস্থার কী হবে, সেসবও এখন নতুন প্রশ্নের মুখে।
পূর্বাচলে হতে যাওয়া স্টেডিয়ামটিতে অন্তত পাঁচটি ফেডারেশনকে জায়গা দেওয়ার কথা ছিল বিসিবির। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে সরকার তথা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অনুরোধে রাজিও হয়েছিল দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হওয়া বোর্ড সভার পর নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে বিসিবি। নাজিব আহমেদসহ কয়েকজন বোর্ড পরিচালকের প্রস্তাব ছিল পাঁচ ফেডারেশনের জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজার। সাবেক বিসিবি সভাপতি ও যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনও সেটা নিয়ে আলাপের আশ্বাস দেন। এরপর ফেডারেশনগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে বিকল্পের প্রস্তাব দেন সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী পাপন। যদিও সেখানে অন্তত দুটি ফেডারেশনকে জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিলেন বলে জানানো হয়েছিল। অন্য তিন ফেডারেশনের জন্য এনএসসির মাধ্যমে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ব্যবস্থার আশ্বাস দেন তারা। আর এখন স্টেডিয়ামের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে ওইসব ফেডারেশনও।
‘দ্য বোট’ স্টেডিয়ামে অন্তত দুটিকে রাখার যে আশ্বাস মিলেছিল, তাদের একটি ছিল দাবা ফেডারেশন। নির্ধারিত জায়গার অভাবে এতদিন ধরে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল, ক্লাব কিংবা এনএসসিতে ইভেন্টগুলো পরিচালনা করতে হয়েছিল তাদের। এমনকি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট করতেও বছরে বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছিল কোটি টাকার মতো। স্বাধীনতার পর পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টার ও সম্ভাবনাময় প্রচুর ক্রীড়াবিদ পেয়েও সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি তারা। সার্বক্ষণিক অনুশীলনের অভাবটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ক্রীড়াবিদদের। কিন্তু দ্য বোটে আশ্বাস পাওয়ার পর যে আশার আলো জ্বলেছিল মনে, সেটাও এখন নেভার শঙ্কায় তারা।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম বিষয়টি নিশ্চিত করে কালবেলাকে বলেন, ‘আশার আলোর বাতি জ্বলার আগেই তো নিভে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়ে গেল। নতুন সরকার আসছে, অনেক সংস্কারের সঙ্গে আদৌ এখানে কবে কাজ হবে; সেসবও তো জানি না।’ তবে চাইলেই বিকল্প সম্ভব মনে করেন তিনি, ‘অনেকগুলো ফেডারেশনের জায়গা খালি পড়ে আছে। অন্তত পাঁচ কাঠা বরাদ্দ পেলেও আমরা বিশ্ব দাবা সংস্থা (ফিদে) থেকেও অর্থ এনে ভবন নির্মাণ করতে পারব। আমি ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর তার সঙ্গেও আলাপ করব।’ তবে বিকল্প পাওয়ার আশ্বাসে আশা দেখছেন জুডো, কারাতের কর্মকর্তারা। সাবেক কারাতেকা মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু বলেছেন, ‘কমলাপুরে আমাদের জন্য ব্যবস্থার আশ্বাস পেয়েছি। আশা করি, সেখানে আমরা দ্রুত জায়গা পাব।’