ঘরোয়া ক্রিকেটে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ের অভিযোগ নতুন নয়। বিশেষ করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে এমন অভিযোগ অহরহ। তবে এবার ভিন্ন এক ঘটনার দেখা মিলেছে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিকেট লিগে। ম্যাচের পর ম্যাচ একটি ক্লাবের ডাগআউটে দেখা মিলছে বিসিবির একজন ম্যাচ রেফারি ইমদাদুল হক ইন্দুকে। যিনি সাবেক এক আম্পায়ারের ভাই। বিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ৮৯টি ম্যাচের অফিসিয়াল হিসেবে কাজ করছেন ইন্দু। তিনি এখন মোহাম্মদপুর ক্রিকেট ক্লাবের মেন্টর হিসেবে কাজ করছেন। এতেই কোনো না কোনো ম্যাচে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে গত শুক্রবার ফতুল্লা স্টেডিয়ামে নবাবগঞ্জ ক্রিকেট কোচিং একাডেমির বিপক্ষে ম্যাচেই তার ডাগআউটে থাকা নিয়ে আঙুল উঠেছে। কারণ আম্পায়ারিংয়ের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কোনো না কোনো সময় ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। কাজেই তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোচিংয়ের পাশাপাশি ইন্দু বিসিবির চুক্তিভিত্তিক ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে রেফারিং না করে মেন্টর হতে বিসিবি থেকে অনুমতি নিয়েছেন তিনি। তবে ডাগআউটে তার উপস্থিতি আম্পায়ারিংকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন নবাবগঞ্জের কর্মকর্তারা।
শুক্রবার ম্যাচটি শুরুর আগে সমান ৮ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়েও টেবিলে মোহাম্মদপুরের ওপরেই ছিল নবাবগঞ্জ। জিতলে রেলিগেশনের শঙ্কামুক্ত হওয়ার বড় সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু সে ম্যাচে ১৫৭ রান তাড়ায় শেষ ওভারের ১ রানে জিতে টেবিলে নবাবগঞ্জকে টপকে ওপরে উঠে যায় মোহাম্মদপুর। সেখানে সরেজমিনে উপস্থিত ছিল কালবেলা। ম্যাচ শেষে আম্পায়ারদের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠেই বাগবিতণ্ডা হতে দেখা গেছে। দুটি নো বল ও একটি ওয়াইড না দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলে নবাবগঞ্জ। একই সঙ্গে অভিযোগ ওঠে, প্রতিপক্ষের ডাগআউটে বিভিন্ন সময় ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করা ইন্দু থাকায় সিদ্ধান্ত দিতে সাহস পাননি ফিল্ড আম্পায়াররা। নবাবগঞ্জের কোচিং স্টাফের সদস্য আরিফুল ইসলামই বলেছিলেন সেসব কথা। ফিল্ড আম্পায়ারদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে নবাবগঞ্জের এই কর্মকর্তাকে ১৫ হাজার টাকা অর্থ জরিমানা ও এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলটির বোলার শাওন গাজীকে ১০ হাজার টাকা ও এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছেন ম্যাচ রেফারি সুব্রত চৌধুরী।
ক্লাব কর্মকর্তা কিংবা ক্রিকেটারকে জরিমানা করলেও সমস্যার জায়গা থেকেই যাচ্ছে। ক্রিকেটের পাইপলাইন খ্যাত গুরুত্বপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে বিসিবির ম্যাচ রেফারি হয়েও কেউ মেন্টর হিসেবে ডাগআউটে থাকতে পারেন কি না, সেটা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। আম্পায়ার্স কমিটির সূত্র বলছে, বেতনভুক্ত না হওয়ায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে নিষেধ ছিল না। তবে আম্পায়ার্স কমিটির এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘নৈতিক দৃষ্টি থেকে ভাবলে তিনি কোচিং করালেও ডাগআউটের মতো জায়গায় থাকতে পারেন না। কেননা তিনি ম্যাচ রেফারি হওয়ায় ফিল্ডে থাকা আম্পায়াররা কোনো না কোনো সময় তারই অধীনে ছিলেন। এতে করে প্রভাব না পড়লেও এটা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক হয়নি।’
একই সঙ্গে এটাকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করে।’ অবশ্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড কীভাবে রোধ করা যায়, সেটা নিয়ে ভবিষ্যতে কতটা সতর্ক থাকবে বিসিবি, সেটাও দেখার বিষয়। তবে কোনো দলের সঙ্গে বিসিবির কর্মকর্তা থাকলে সেটা ম্যাচের ওপর যে প্রভাব ফেলতে পারে, নবাবগঞ্জ-মোহাম্মদপুর ম্যাচেই উঠেছে তার অভিযোগ।