চট্টগ্রামে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মাদক ক্রয়-বিক্রয়। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, পুলিশের কার্যক্রমের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে মাদকের কারবার এখন ওপেন সিক্রেট। কিশোর ও তরুণরা এ কাজে যুক্ত। পুলিশ যেন দেখেও দেখে না। পত্রপত্রিকায় এ-সংক্রান্ত খবর ছাপা হলেও মেলেনি সুফল। মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানও চোখে পড়েনি।
যদিও নগর পুলিশ বলছে, পুলিশের কার্যক্রম অনেক সক্রিয়। বিভিন্ন থানা এলাকায় বিপুল ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত সরকার পতনের পর পটপরিবর্তন হলেও থেমে নেই মাদক কারবার। এর মধ্যে সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবার প্রতি আগ্রহ বেশি বিক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্যে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে পুঁজি করে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান ঢুকেছে। চেকপোস্ট ছিল না। তখন ছাত্র আন্দোলনের ওপর সবার চোখ। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে পুলিশের কার্যক্রমও স্থবির। ফলে বন্দর নগরীতে ইয়াবার খুচরা বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।
অভিযোগ আছে, সিএমপির ডবলমুরিং থানা, হালিশহর, পাহাড়তলী ও খুলশী থানা এলাকা মাদক বিক্রির জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য। এই চার থানা এলাকায় ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। ডবলমুরিং থানা এলাকার আগ্রাবাদ ঢেবার উত্তর ও দক্ষিণ পাড়, মোগলটুলি, পাঠানটুলি, বানছালপাড়া, হাজিপাড়া, চৌমুহনী নাজিরবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, বেপারিপাড়া, হালিশহর থানা এলাকার ছোটপুল সিএনজি পাম্প সংলগ্ন, শান্তিবাগ, সদরঘাট থানা এলাকায় মাদারবাড়ি পোড়া কলোনি, খুলশী থানা এলাকায় আমবাগান, পাহাড়তলী থানা এলাকায় বারো কোয়ার্টার, রেললাইন ইত্যাদি স্থানে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির অবস্থা আরও রমরমা। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও কোনো অভিযান না হওয়ায় মাদক বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
সূত্র জানিয়েছে, হালিশহর থানাধীন শানিগবাগ ১০ নম্বর লেন কবরস্থান সংলগ্ন বালুর মাঠের বিপরীতে বসবাসকারী পারভিন আক্তার মূলত পরিচিত ইয়াবা পারভিন নামে। নিজস্ব দোতলা ভবনে লোহার গেট তালা দিয়ে খুচরায় দৈনিক আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার ইয়াবা বিক্রি চলে।
ডবলমুরিং থানাধীন হাজিপাড়ায় মায়ের (লাকি) ব্যবসার হাল ধরেছে ছেলে সগীর। মোবাইলে সেট করা লোকেশন অনুযায়ী মোটরবাইক চেপে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয় ইয়াবা। আগ্রাবাদ ঢেবার দুই পাড়ে ইয়াবা ব্যবসার অন্তরালে ছিলেন পাঠানটুলি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা। বর্তমানে অনেকে পলাতক। অবশিষ্ট যারা আছেন তাদের ছত্রছায়ায় ব্যবসা আরও জমজমাট।
জমজমাট মাদারবাড়ি পোড়া কলোনি মাদকের বাজার। ১৩ নম্বর ওয়ার্ড পাহাড়তলীতে স্থানীয় আলমগীর, জাহাঙ্গীর, বিড়ি বাবু শাহানাজ, আমবাগান রেললাইনের পাশে আলমগীর, গাঁজা সম্রাট, রবিউল হোসেন ওরফে বিড়ি বাবু, মো. মিশু, মাসুদ রানা, জাহাঙ্গীর, সোনিয়ার মার দুই নাতি মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আগস্টের আগে আড়ালে ইয়াবা, গাঁজা বিক্রি হতো। তেমন কোনো অভিযান হয়নি। ক্রেতারা গ্রেপ্তার হলেও বিক্রেতারা থাকত ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু আগস্টের পর থেকে মাদকের বেচাকেনা চলে প্রকাশ্যে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের যেন এখন সুদিন। সরকার পরিবর্তনের পর র্যাবের কার্যক্রম সক্রিয় রয়েছে। এই সংস্থাটি ইয়াবার বড় চালান জব্দ করছে। কিন্তু এলাকাভিত্তিক খুচরা ব্যবসায়ীদের ডেরায় র্যাবের অভিযান পরিচালিত হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীদের সাহস দিনের দিন বেড়ে চলছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মোহাম্মদ আলী হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমাদের অভিযান চালাতে বাধা নেই। ইয়াবার চালানসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া কাজের পরিধিও অনেক বেড়েছে। এলাকাভিত্তিক মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আইনের ফাঁকফোকরে জামিনে বেরিয়ে আবারও আগের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে তারা। মাদকসহ সব অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে নগর পুলিশ সুপার (এডিসি-পিআর) কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ কালবেলাকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। খুচরা বা পাইকারি বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলে গণমাধ্যমে আনা হয় না। বড় চালান জব্দ করা হলে সেগুলো গণমাধ্যমে জানানো হয়। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি।