দৈনিক কালবেলার চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ সুমন। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচ দিয়ে ঢুকে যায় রাবার বুলেট। সেটা বের করা গেলেও ক্ষত সারেনি এখনো। দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ছুটে চলেছেন কাজপাগল এই সংবাদকর্মী।
গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
যখন যেখানে ঘটনা ঘটছে, ক্যামেরার লেন্সে সেটাই ফ্রেমবন্দি করছেন তিনি। আর্থিক সংকট থাকলেও নিজের কাছেই সেই সীমাবদ্ধতা লুকিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। অফিসের পাশাপাশি কিছু ফটো সাংবাদিক সহকর্মী এগিয়ে এলেও অন্য কেউ তার খবর রাখেননি। এ নিয়ে অক্ষেপও নেই তার।
গত জুলাইয়ের প্রথম দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। দিন দিন জোরালো হয় আন্দোলন। ব্যস্ততা বাড়ে সাংবাদিকদের। চট্টগ্রামে গত ১৫ জুলাই থেকে আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েন। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। এরপর সারা দেশেই আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে।
১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, ষোলোশহর, মুরাদপুর এবং ২ নম্বর এলাকা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেদিন বহদ্দারহাটে সমাবেশ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিরীহ ছাত্রদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। নিক্ষেপ করা হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। নিহত হন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম উদ্দিন ও এমইএস কলেজের ছাত্র তানভীর সিদ্দিকী। সেখানে ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের ছবি তুলছিলেন সুমন।
সুমন বলেন, ১৮ জুলাই বহদ্দারহাট এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি হয়। বিভিন্নভাবে আমি সংঘর্ষের ছবি তুলছিলাম। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পায়ে ব্যথা অনুভব করলাম। পায়ের ওপর শক্ত করে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছিল। তাকিয়ে দেখলাম প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। হাত দিতেই দেখলাম গুলি হাঁটুর হাড় ভেদ করে বের হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেলাম। সহকর্মীদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিলাম।
এখনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ব্যথা কিছুটা থাকলেও আগের চেয়ে ভালো আছি। এ পর্যন্ত দৈনিক কালবেলার চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম ও ফটোসাংবাদিক সহকর্মী ছাড়া কেউই আমার খোঁজ নেয়নি। বিশেষ করে সাইদুল ভাই আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। আশা করি, সামনে কিছু চিকিৎসা শেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব।
কালবেলার চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও সুমন আসলে খুবই কাজপাগল একটা ছেলে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তিনি যথেষ্ট সচেতন। বহদ্দারহাটে যখন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তখন আমরাও সেখানে ছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুমন গুলিবিদ্ধ হন। এমন একটি ঘটনা খুবই দুঃখজনক। তাকে যতটুকু সম্ভব আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করে আসছি। সবার সহযোগিতা পেলে তার পারিবারিক সুবিধা হবে বলে মনে করি।