রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৯:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অসংখ্য অপরাধের পরও থমকে আছে ডা. ফাতেমার বিভাগীয় মামলা

অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে মন্ত্রণালয়
অসংখ্য অপরাধের পরও থমকে আছে ডা. ফাতেমার বিভাগীয় মামলা

সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে অন্য চাকরিতে যোগদান; অব্যাহতির বিষয় গোপন করে দেড় বছর পর ফের উচ্চতর পদে ফেরা, বিদেশে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন ইত্যাদি অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তিনি ডা. ফাতেমা দোজা। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের এই সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ নভেম্বর একটি বিভাগীয় মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে, এমনকি তিনি নিজেও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অভিযোগনামায় লেখা হয়েছে, অভ্যাসগতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের প্রবণতা রয়েছে তার। কিন্তু তারপরও মামলার অগ্রগতি নেই।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে আবেদন করেন ডা. ফাতেমা। আবেদনটি পরের দিন হৃদরোগ হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে অগ্রায়ণ করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করেন। এসব তথ্য গোপন করে ২০১৩ সালের ১১ জুন তিনি ফের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যোগদান করেন। চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার তারিখ থেকে পুনঃযোগদানের তারিখ পর্যন্ত তার কোনো ছুটি মঞ্জুর হয়নি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, ডা. ফাতেমা ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে উত্তর আমেরিকা রেডিওলজি সোসাইটির (আরএসএনএ) ১০৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশ নিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে আবেদন করেন। করোনাকালীন অপ্রয়োজনীয় বিদেশযাত্রায় অনুমোদন না থাকায় ব্যয়ভার আয়োজক সংস্থা বহন করবে উল্লেখ করে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করেন। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করায় ডা. ফাতেমা দোজাকে দুটি পৃথক কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তবে তিনি কোনো জবাব দেননি। এ ছাড়া ডা. ফাতেমা ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত অবস্থায় ২০০৪ সালের ২ মে ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। চার মাস এক দিন কারাভোগের পর ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান। ১১ সেপ্টেম্বর আবার কাজে যোগ দেন। ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার ও কারান্তরীণ হওয়ার তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করেন এবং পরে ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা বলে চার মাস আট দিনের অর্জিত ছুটির আবেদন করেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক নিয়মে বেতন-ভাতা ও পদোন্নতির সুযোগ নেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ডা. ফাতেমা দোজার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে এবং মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এসব অভিযোগ তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডা. ফাতেমা দোজা লিখিতভাবে কমিটিকে জানান তিনি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন।

তবে লিখিত জবাবে ডা. ফাতেমা দোজা স্বীকার করেন, তিনি ২০০৪ সালের ২ মে থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফৌজদারি মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিলেন, সে তথ্য এড়িয়ে যান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা অধিশাখার ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর এক পত্রে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির জন্য তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে রুজুকৃত ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার, কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত জেলহাজতে অন্তরীণ ছিলেন, মামলায় আদালত কী আদেশ দিয়েছিলেন তার বিশদ তথ্যাদি দশ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের পর চার মাস অতিবাহিত হলেও তিনি সেগুলো দেননি। ফলে থমকে আছে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলার নিষ্পত্তি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১০

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

১১

‘সঠিক ও মানসম্পন্ন সংবাদ উপস্থাপনে সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে’

১২

আন্দরকিল্লা মসজিদ আইকনিক করতে ব্যয় ৩০০ কোটি

১৩

মেসির চেয়েও ধনী শুধু দুইজন ক্রীড়াবিদ!

১৪

প্রবাসীর ছেলেকে দাদা-দাদির কবরের পাশে ঠাঁই দিল না চাচারা

১৫

শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১৬

বিপিএলের জন্য নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে রাজশাহী স্টেডিয়াম

১৭

সাংবাদিককে আটক করে পুলিশের মারধর, গায়েব করার হুমকি

১৮

রেড ক্রিসেন্ট থেকে এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি

১৯

নাসিরের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আবারও এনসিএল শিরোপা রংপুরের ঘরে

২০
X