টঙ্গী পূর্ব থানার স্টেশন রোডের দক্ষিণ নতুনবাজার এলাকায় গত ৪ এপ্রিল সকালে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান গৃহবধূ শামিমা আক্তার সাথী। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, সাথী ট্রেনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এ কারণে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। তবে মৃতের পরিবারের দাবি, সাথীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার স্বামী। থানায় হত্যা মামলা না হলে তারা লাশ গ্রহণ করবেন না। এ কারণে পাঁচ দিন ধরে মর্গেই পড়ে আছে সাথীর মরদেহ।
নিহত শামিমা আক্তার সাথী (২৬) চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার নুরুল্লাপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মৃত শামসুল হকের মেয়ে। তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সাথীর বিয়ে হয় গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সুরতরঙ্গ রোড এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। আগে থেকেই সাইফুল মাদকাসক্ত ছিলেন। এ কারণে প্রায়ই সাথীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপও দিতেন। সর্বশেষ, গত ২৮ মার্চ ঈদের দুই দিন আগে সাইফুল যৌতুকের দাবিতে সাথীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে তিনি ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেন।
নিহতের খালাতো বোন নাদিরা মামুন লিপি কালবেলাকে বলেন, ‘সাইফুলের মাদকাসক্তের বিষয়টি আমরা আগেই জানতাম। বিয়ের সময় বলা হয়েছিল সে ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ের পর প্রায়ই সাথীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যেত। বহুবার আমরা পারিবারিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রতিবারই সাইফুল ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এটি আত্মহত্যা নয়। সাথীকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’
তবে সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন, ‘সাথীকে ফজরের নামাজের সময় ডাকলে সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। পরে জানতে পারি সাথী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে।’ যৌতুক এবং মাদকের অভিযোগকে মিথ্যা বলেও দাবি করেন সাইফুল।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের সুযোগ নেই। টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কালবেলাকে বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, ট্রেন আসতে দেখে অন্যরা সরে গেলেও সাথী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে লাইনে দাঁড়ান। তবে প্রকৃত কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর।’
মন্তব্য করুন