বীর সাহাবী
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নিত্যপণ্যের দাম নীরবে বাড়ছে

বাজারদর
নিত্যপণ্যের দাম নীরবে বাড়ছে

এবার রোজার মাসে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম ছিল সহনীয়। ভোক্তা পুরো রমজান মাসজুড়ে স্বস্তিতে ছিলেন। তবে এই স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছে বাজার সিন্ডিকেট। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। ফলে অস্বস্তি বাড়ছে ভোক্তার মনে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রোজার মাসে সরকারের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারি করা হয়েছে। ফলে এ সময় চাইলেও সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থিতিশীল করতে পারেনি; কিন্তু রোজা চলে যাওয়ার পর পরই দেখা যাচ্ছে নীরবে সক্রিয় হতে শুরু করেছে সিন্ডিকেট। এখানে সরকারের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, নিউমার্কেট, মালিবাগ, মুগদা, হাতিরপুল, রামপুরা বাজারে মোটা চাল গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। সেই চাল গতকাল বুধবার ২ টাকা কেজিতে বেড়ে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের পাশাপাশি বেড়েছে খোলা আটার দাম। প্রতি কেজি খোলা আটা গত সপ্তাহে ৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল ২ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। চাল-আটার পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ সপ্তাহের ব্যবধানে এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া ফার্মের ডিমের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি হালি ডিম ৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়।

সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৪ টাকা: ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭৫ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ কেউ কর ছাড় দিয়ে পুরোনো দামে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে গতকাল এক পোস্টে বলা হয়েছে, সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে। দাম বাড়ানোর পেছনে যত অজুহাতই সরকার দিক না কেন, সেটা অগ্রহণযোগ্য।

বেড়েছে সবজির দাম : শীতের সবজির সরবরাহ শেষ হওয়ায় বেড়েছে সবজির দাম। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শীতকালীন বেশিরভাগ সবজির সরবরাহ শেষ। এখন গ্রীষ্মের সবজি বাজারে। বাজারে দৈনিক নতুন সবজি আসছে। আর এসব সবজির দামও চড়া। রাজধানীর বাজারগুলোয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০, বরবটি ৫০, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৫০ টাকা, পটল ৪০, গাজর ৩০, শসা ৫০, কহি ৬০, শিম ২৫-৩০, সজনে ডাটা কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, রমজানের পর কিছু কিছু সবজির দাম বাড়তি। কাঁকরোল, পটল এগুলো নতুন। এখনো পুরোপুরি বাজারে আসেনি। বাজারে এসব পণ্য সরবরাহ বাড়লে তখন দাম কিছুটা কমতে পারে। আর গরমের দিন সবজির দাম এমনিতেই বেশি থাকে।

কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম, স্থিতিশীল গরু-খাসির: ঈদুল ফিতরের সময় ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্রয়লার, দেশি মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়ে যায়। তবে ঈদ চলে যাওয়ার পর চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজির ব্রয়লারের দাম গতকাল কমে দাঁড়ায় ১৮০ থেকে ২১০ টাকায়। আর কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। মুরগির দাম কমলেও বাজারে স্থিতিশীল গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। সূত্রাপুর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, এখন বেচাকেনা কম। মানুষ মুরগি কম খাচ্ছেন। এতে চাহিদা কমায় দামও পড়ে গেছে। ঈদের সময় চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা যা বলেছেন: কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন কালবেলাকে বলেন, বাজার ব্যবস্থা সংস্কার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট কাটার উৎসব থামানো যাবে না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য বারবারই অনৈতিক কৌশল অবলম্বন করেন। দাম বাড়ানোর চক্রান্ত হলেই তারা সরবরাহ বন্ধ করে দেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগেই ব্যবসায়ীরাই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সরকারকে চাপে ফেলে সেই দাবি তারা পূরণ করে, সরকার শুধু বৈধতা দেয় মাত্র।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি নামছে। টাকার ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমরা চাই না সাধারণ মানুষের মাঝে চাপটা পড়ুক। আমাদের সামগ্রিক প্রচেষ্টার মধ্যে এটা রেখেছি। তার পরও মূল্যবৃদ্ধি পেলে সংসার খরচে চাপ ততটা পড়বে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাউল আবুল সরকারের কঠোর শাস্তি চাইলেন রাশেদ খাঁন

ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা সময় সকালে নাকি বিকেলে

বিপিএলে অন্তর্ভুক্ত হলো নতুন দল ‘নোয়াখালী এক্সপ্রেস’

নলডাঙ্গায় ছড়িয়ে পড়ছে জাল টাকা

ইথিওপিয়ায় ১২ হাজার বছর পর নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

ধারাবাহিকে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি: দেবযানী

পিঠা খেয়ে একই পরিবারের ১১ জন অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি

খাবার নিয়ে বিপাকে রণবীর কাপুর

প্রাথমিক শিক্ষকদের ৩ দিনের কর্মবিরতি শুরু

মারা গেলেন কিংবদন্তি জার্মান অভিনেতা

১০

কনকনে শীতে কাঁপছে তেঁতুলিয়া

১১

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সিট প্ল্যান প্রকাশ

১২

এ ছবিটিই বলে দেবে আপনার মানসিক চরিত্র

১৩

দুধ দিয়ে গোসল করে দাম্পত্যের ইতি টানলেন প্রবীর

১৪

দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৫

রাকুলের সতর্কবার্তা

১৬

বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত

১৭

হেলে পড়া ভবন পরিদর্শন শেষে যা জানাল বিসিসি

১৮

মধ্যরাতে পাকিস্তানের বোমা হামলায় ৯ আফগান শিশুসহ নিহত ১০

১৯

যেসব দেশে থাকার জন্য টাকা পাওয়া যাবে

২০
X