কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এখন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাইবার স্পেসেও কোনো ধরনের প্রচার চালাতে পারবেন না। সেখানেও নজরদারি করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগ ঠেকাতে সরকার কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সাইবার স্পেসে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সরকারের জন্য অনেকটা কঠিন হবে।
জুলাই আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়ে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর গত সোমবার আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাইবার স্পেসে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতৎপরতা রোধে সাইবার প্যাট্রলিং করা হচ্ছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাকারীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। জানা গেছে, সাইবার স্পেসে আওয়ামী সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম নিষিদ্ধে দলটির ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেবে সরকার। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ওয়েবসাইটও বাংলাদেশে ‘ব্লক’ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের যেসব ওয়েবসাইট আছে সেগুলো ব্লক করতে বিটিআরসির মাধ্যমে একটা অনুরোধ করবে সরকার। এর বাইরে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্লক করার জন্য টেক ফার্মগুলোর কাছে অনুরোধ করা হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, সাইবার স্পেসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা সরকারের পক্ষে অনেকটা কঠিন হবে।
সাইবার বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা বলেন, সরকার যদি কোনো রাজনৈতিক দলের অনলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে চায়, তাহলে কিছু প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা যেমন ওয়েবসাইট ব্লক, সোশ্যাল মিডিয়ার রিপোর্টিং বা নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড ফিল্টারিং সম্ভব। তবে বাস্তবে এটি শতভাগ কার্যকর হয় না। কারণ ভিপিএন, টর, প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে সাধারণ জনগণ সহজেই এসব ব্লকড প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারে।
জোহা আরও বলেন, বিদেশে হোস্ট করা কনটেন্ট বা এনক্রিপটেড প্ল্যাটফর্মগুলো সরকারের নজরদারির বাইরে থেকে যায়। কাজেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তিগতভাবে প্রায় অসম্ভব। শুধু আইনগত নির্দেশনা যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি বোর্ডের ইকুইপমেন্ট ফ্লিটার আপগ্রেডেশন লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধি ইস্যুতেও কাজ করতে হবে।
টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার হয়তো নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে কোনো কনটেন্ট সরাতে পারে; তবে বিদেশ থেকে হোস্ট করা হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
মন্তব্য করুন