এখন বর্ষাকাল। এ সময়টায় গ্রামীণ জনপদে মানুষের চলাচল, জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন নৌকা। তাইতো বর্ষা মৌসুম ঘিরে জমজমাট বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নৌকার হাট। নদী-খাল অধ্যুষিত এ অঞ্চলের মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন মৎস্য শিকার, সবজি উৎপাদনসহ নানা কৃষি কাজে। উৎপাদিত মাছ-সবজি বাজারে বিক্রি করে অর্জিত অর্থে চলে তাদের সংসার। বর্ষা মৌসুমে তাদের এ কাজে প্রধান চালিকাশক্তি কাঠের তৈরি নৌকা।
নৌকার কারিগর ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, মূলত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলাকার মৎস্য শিকারিরা জীবন ধারণ ও যাতায়াতের জন্য নৌকার ওপর নির্ভরশীল। এ সময় তারা নৌকায় জাল পেতে, চাই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকার করেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। এদিকে বর্ষার কারণে কাঠমিস্ত্রিদের বাড়িঘর নির্মাণের তেমন কাজ থাকে না। তাই এ সময় নিজেদের বাড়িতে বসেই তৈরি করেন বিভিন্ন আকার ও নকশার নৌকা। গ্রাম ঘুরে গাছ কিনে স মিলে চেরাই করে বাড়িতে বসেই নৌকা তৈরি করেন। পরে তা বিক্রির জন্য নিয়ে যান হাট-বাজারে। এর মাধ্যমে সংসারের বাড়তি আয়ের পথ বেছে নেন আগৈলঝাড়ার সহস্রাধিক মিস্ত্রি। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন পরিবারের সদস্যরা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, এসব এলাকার অসংখ্য পরিবার কাঠমিস্ত্রি পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে গাছ কিনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। এর মধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, মেহগনি, কদম, রয়না, উরিয়া আমকাঠ দিয়ে ডিঙি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। নৌকার আকার ও কাঠের ওপর নির্ভর করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় নৌকা বিক্রির হাট সাহেবের হাট ও বাহাদুরপুর। এখানে সপ্তাহে দুদিন বসে নৌকার হাট। প্রতি সপ্তাহে দুই হাটে বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ নৌকা। এসব হাটে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মূল্যের নৌকা বিক্রি হয়। একটি মাঝারি আকারের নৌকার মূল্য ৭-৮ হাজার টাকা। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুর, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যান।
কথা হয় সাহেবের হাটে নৌকা কিনতে আসা গৌরনদী উপজেলা বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের মো. শাহজাহান হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি জানান, পানের বরজ ও গরুর খাবার সংগ্রহের জন্য ৮ হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে দুটি নৌকা কিনেছেন।
আগৈলঝাড়ার গৈলা গ্রামের শওকত ফড়িয়া জানান, মাছের ঘেরের জন্য একটি নৌকা কিনতে এসেছেন। তবে কাঠ ও লোহার মূল্য বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় নৌকার মূল্য একটু বেশি। উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামের নির্মল হালদার ও স্বপন মৌলি জানান, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ২৪টি নৌকা কিনে তা বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন সাহেবের হাটে। হাটে এসে বিক্রি করেছেন ৮টি নৌকা।
সাবেহের হাট কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান শিকদার বলেন, শতবর্ষের এই হাটে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার নৌকার হাট বসে। উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারি ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের পদচারণায় জমে ওঠে নৌকার হাট। আর এই নৌকার তৈরির সঙ্গে জড়িত সহস্রাধিক পরিবার। যাদের বর্ষা মৌসুমে রুটি-রুজির জোগান হয় এই হাটে নৌকা বিক্রি করে।
মন্তব্য করুন