ক্ষমতার পালাবদলে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে এক ধরনের প্রতিযোগিতা দেখা যায় বাংলাদেশে। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ পর্যন্ত এক বছরে অন্তত ২৪টি দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। নিবন্ধিত দল হিসেবে নির্বাচনে যাতে অংশ নিতে পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেছে দলগুলো। নির্বাচনের আগে এসব দল নিবন্ধন পাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেছেন দলগুলোর নেতারা।
এক বছরে দুই ডজন দলের আত্মপ্রকাশ হয়। আর এই সময়ে নিবন্ধন পেয়ে নিজ দলের প্রতীকে ভোটের অধিকার পায় ছয়টি দল। এ নিয়ে মোট ৫১টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনপ্রাপ্ত। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তাই আওয়ামী লীগ বাদে নিবন্ধিত দল ৫০টি। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো—জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি শুধু জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হলেও নিবন্ধন না পেলে কমিশনের বিবেচনায় সেগুলো ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কেননা, কমিশন শুধু নিবন্ধিত দলগুলোকে নিয়েই কাজ করে থাকে। তাই তাদের নিবন্ধন সনদ নিয়েই ভোটের রাজনীতিতে নামতে হবে। এরই মধ্যে সে প্রক্রিয়া চলছে। তবে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ১৪৫টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরও যেসব নতুন দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে সেগুলো হলো—নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি, ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি, সমতা পার্টি, বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), সার্বভৌমত্ব আন্দোলন, বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ মুক্তির ডাক, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), জাতীয় বিপ্লবী পার্টি। এ ছাড়া চলতি বছরের আত্মপ্রকাশ করে দেশ জনতা পার্টি বাংলাদেশ, আম জনতার দল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি), বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জনতার বাংলাদেশ পার্টি, জনতার দল, গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি, (যা পরবর্তীতে আম জনগণ পার্টি নামে পরিবর্তন হয়) ও গঠন হয় জনতা পার্টি বাংলাদেশ। দলগুলো নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করেছে। এদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় থাকা ছাত্রদের দল এনসিপি।
জানা গেছে, নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ১৪৫টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তথ্য ঘাটতি পূরণের জন্য চিঠি দেওয়ার পর ৩ আগস্টের মধ্যে ৮০টি দল তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। সময় বাড়াতে আবেদন করে ৬টি দল। ৫৯টি দল কোনো সাড়া দেয়নি। সময় বাড়ানো ও তথ্যের ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের ৫ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। প্রধান এ শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নতুন করে নিবন্ধনের জন্য ১৪৫টি দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৮০টি দলের কাগজপত্রে সমস্যা ছিল। তাদের চিঠি দিয়ে নতুন করে কাপজপত্র চাওয়া হয়েছে।
জনতা পার্টি বাংলাদেশের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, আশা করছি, নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পাব।
বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির মহাসচিব ফাতিমা তাসনিম বলেন, আমাদের দলে আত্মপ্রকাশ করার পর ২২ জুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। এর কিছুদিন পর ইসি থেকে রিকোয়ারমেন্ট দিয়ে চিঠি দেয়। আশা করছি, আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নেবে।
আম-জনতা দলের আহ্বায়ক মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করছি। আশা করি, নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারব।
মন্তব্য করুন