

বাড়িতে, অফিসে বা ভ্রমণরত অবস্থায় রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য জরুরি। সেজন্য প্রয়োজন গ্লুকোমিটার নামের যন্ত্রটি। গ্লুকোমিটার থাকলে সহজে ঘরে বসে নিজেই কাজটি করতে পারেন আক্রান্ত রোগী। যন্ত্রটি হাতের কাছে রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও জটিলতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। এক কথায়, এটি ডায়াবেটিক রোগীর জন্য দরকারি তথ্য সরবরাহ করে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন, নিয়ন্ত্রণের মাত্রা, লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো হলো কি না। খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও ব্যায়াম কীভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করে, তা আন্দাজ করা যায়। গ্লুকোজের মাত্রার নিয়মিত রেকর্ড রাখলে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার ধরন নির্ণয়ে সুবিধা হয়। অসুস্থতা বা স্ট্রেস (চাপ), হাইপোগ্লাইসেমিয়া ইত্যাদি জরুরি অবস্থায় এটি খুবই দরকার।
রক্তের গ্লুকোজ কখন কখন মাপবেন: টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিনে ৪ থেকে ১০ বার (খাওয়ার ও নাশতার আগে, ব্যায়ামের আগে ও পরে, ঘুমানোর আগে এবং কখনো কখনো শেষ রাতে)। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাদের সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-চার দিন নিতে হবে। কোনোদিন সকালের নাশতার আগে ও পরে, এক দিন দুপুরের খাবারের আগে ও পরে, অন্যদিন রাতের খাবারের আগে ও পরে। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী, যারা খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও মুখে খাবার ওষুধ নিচ্ছেন, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে শুধু যারা সালফনাইল ইউরিয়া (গ্লিক্লাজাইড, গ্লিমেপিরাইড) গ্রহণ করছেন, তাদের সপ্তাহে তিন-চার দিন (সকালে নাশতার আগে-পরে, দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর) পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে সপ্তাহে অন্তত একদিন সকালের নাশতার আগে-পরে, দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর গ্লুকোজ মাপতে হবে। তবে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে, অন্য কোনো অসুস্থতা যেমন—জ্বর, ডায়রিয়া ইত্যাদি থাকলে, কোনো কারণে স্বাভাবিক রুটিনের ব্যত্যয় ঘটলে, ডায়াবেটিসের নতুন কোনো ওষুধ শুরু করলে ঘন ঘন পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। রক্তে গ্লুকোজ স্বল্পতার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) কোনো উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা করতে হবে।
গ্লুকোজের মাত্রা লক্ষ্য রাখা: ডায়াবেটিক রোগীর অব্যাহতভাবে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কত থাকলে তাকে ভালো বলা যায়? খাওয়ার আগে প্রতি লিটারে ৪.২-৭.২ মিলিমোল এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ১০ মিলিমোলের নিচে গ্লুকোজের মাত্রা রাখা উচিত। তবে বয়স, অন্যান্য অসুখ, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, গর্ভাবস্থা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্নতর হতে পারে। কোনো কোনো গ্লুকোমিটার মিলিগ্রাম এককে গ্লুকোজের ফল দেয়, এ ক্ষেত্রে এই মাত্রাকে ১৮ দিয়ে ভাগ করলে মিলিমোল এককে ফল পাওয়া যাবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন