বিএনপির আজ বুধবারের সমাবেশ ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এই সমাবেশ থেকে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা আসার কথা। এরই মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওই সমাবেশ করার লিখিত অনুমতি মিলেছে পুলিশের কাছ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ২৩ শর্তে এই অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন পুলিশ বা নগরবাসীর জন্য সুখকর ছিল না। ওই সময়ের কর্মসূচিগুলোতে ভাঙচুর ছাড়াও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমার বিস্ফোরণে বহু হতাহত হয়েছে। আজকে ঘোষিত একদফার আন্দোলনে কী ধরনের কর্মসূচি আসে—তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে পুলিশসহ সবার। বিএনপির এবারের একদফার আন্দোলন অতীতের মতো সহিংসতায় গড়ালে তা ঠেকানোর কৌশল সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কথা বলছেন না। তবে ভেতরে ভেতরে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। আপাতত অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও পেয়েছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘আমি বিএনপির উদ্দেশে বলব, কালকে (আজ বুধবার) ওয়ার্কিং ডে। তাদের জন্য ঢাকা শহরে দুই কোটি মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয়, সে বিষয়টা যেন তারা মাথায় রাখে।’
ডিএমপি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কোনো কর্মদিবসে নয়াপল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সভাসমাবেশের লিখিত অনুমতি দিলেও মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি তাই বিএনপির ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, যে কোনো ধরনের আন্দোলন ঠেকানোর বিষয়টি সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। তবে জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকে। এবারও তা রয়েছে। আজকের সমাবেশ থেকে কী ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, সে দিকে তাকিয়ে আছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। এরপর কৌশল নির্ধারণ করা হবে। কর্মসূচির নামে যদি কেউ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না এমন মনোভাব রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচিতে সহায়তা করা হবে।
রাজধানীর কয়েকটি থানার পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি বুঝে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে যে কোনো মূল্যে নিজ নিজ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা দমনের অভিজ্ঞতা পুলিশের রয়েছে। মানুষের নিরাপত্তায় সবসময়ই পুলিশ প্রস্তুত থাকে এবং তা থাকতে হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, নাশকতার পুরোনো মামলার আসামিরা কে-কোথায়, কারা কারা এলাকার পরিস্থিতি খারাপ করতে পারে, কার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে—এ ধরনের ব্যক্তিদের নামের তালিকা পুলিশের থানা ও বিভাগভিত্তিক থাকে। এসব হালনাগাদ করাও পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। সামনে আন্দোলন-কর্মসূচিতে কোন এলাকায় কারা আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য হুমকি হতে পারেন, তাদের পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো নজরদারিতে রাখছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন গত সোমবার নিজ কার্যালয়ে কালবেলাকে বলেন, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে, জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, জানমালের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে নির্দিষ্ট দল বা কর্মসূচির কোনো বিষয় নয়, সবসময়ই জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশকে কাজ করতে হয় এবং তা করবেও।
মন্তব্য করুন