ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন গ্যালভানাইজ আয়রনওয়্যার (জিআই) তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন অনুযায়ী যে পরিমাণে ভ্যাট দেওয়ার কথা, কারখানা মালিকরা তা দিচ্ছেন না। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, ডেমরা এবং নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। সেই হিসাবে বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু ভ্যাট নয়, আয়করও ফাঁকি দিচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। জিআই তার উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি বন্ধে ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে ঢাকা দক্ষিণের ভ্যাট কমিশনারেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে ছোট-বড় শতাধিক জিআই তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছোট কোম্পানিও প্রতিদিন ২ থেকে ৩ টন তার উৎপাদন করে। বড় কোম্পানিগুলো ৮ থেকে ১০ টন তার উৎপাদন করে থাকে। আর এক টন জিআই তার বাজারে বিক্রি হয় ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে প্রতিটন জিআই তারে ভ্যাট আসে ২১ হাজার টাকা। আর ছোট কারখানাগুলোর প্রতিদিন ভ্যাট আসে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর বড় প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন ভ্যাট আসবে ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সেই অনুযায়ী ভ্যাট পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা।
শুল্ক গোয়েন্দার চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজধানী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গড়ে ওঠা জিআই তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ২০ থেকে ৩০ শতাংশও ভ্যাট দেয় না। এ ছাড়া অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান মালিক ভ্যাটের পাশাপাশি আয়করও ফাঁকি দিচ্ছেন। এসব কারণে শুধু জিআই তার উৎপাদনকারী কারখানা থেকে সরকার বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি সদয় বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, জিআই তার উৎপাদনকারীরা বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দা থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। যেহেতু সবকটি প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন, তাই এই কমিশনারেটকে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, জিআই তার উৎপাদনকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান রাজধানীর পুরান ঢাকা, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও গাজীপুরে অবস্থিত। শুধু গাজীপুর ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানই ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নামমাত্র ভ্যাট দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চললেও সরকার ঠিকমতো ভ্যাট পাচ্ছে না। আর ভ্যাট আদায়ের কার্যকর পদক্ষেপও নিচ্ছে না ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাটের কমিশনার শওকত আলী সাদীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে জিআই তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে জিআই তার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কমিশনারেটের লালবাগ ডিভিশনের আওতাধীন। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে এই ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার লুৎফল কবীর কালবেলাকে বলেন, ‘জিআই তার উৎপাদনে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি আমার জানা নেই। আর শুল্ক গোয়েন্দার এ-সংক্রান্ত চিঠিও আমি পাইনি। যদি সরকার ভ্যাট বঞ্চিত হয়ে থাকে, তাহলে অফিসিয়াল প্রসিডিউর অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’