সিরাজুল ইসলাম একজন তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। তিনি ঢাকার কুর্মিটোলা কাস্টম হাউসের অফিস সুপার পদে চাকরি করেন। মাসে যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু এই চাকরিই যেন তার জন্য আলাদিনের চেরাগ, যার বদৌলতে তিনি গড়েছেন বিপুল সম্পদ। তার নিজের নামে ফ্ল্যাট, স্ত্রীর নামে দোতলা বাড়িসহ একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব সম্পদ তিনি ঘুষের টাকায় অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ জমা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা কাস্টম হাউসের একটি সিন্ডিকেট ঘুষ গ্রহণ, আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির সুযোগ প্রদান, আমদানি পণ্যের ইনভয়েস গোপন করে সংশ্লিষ্ট পণ্য খালাসযোগ্য হিসেবে প্রত্যয়নকরণ, আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্য আটকের পর আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে থাকে। কাস্টমস সুপার সিরাজুল ইসলাম সেই সিন্ডিকেটের একজন সদস্য।
জানা গেছে, ২০২০ সালে ১ এপ্রিল কাস্টম হাউসের একজন ডেপুটি কমিশনারকে প্রধান করে ৪০ সদস্যের একটি শুল্কায়ন টিম গঠন করা হয়। টিমের দায়িত্ব হচ্ছে—আমদানিকৃত নিত্যপণ্য, জরুরি চিকিৎসা ও সেবাসামগ্রী, শিল্পের কাঁচামাল, সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার আমদানিকৃত পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ, কূটনৈতিক সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নসহ খালাস প্রদান এবং রপ্তানি ও ইপিজেডের কার্যক্রম পরিচালনা করা। ওই টিমের সদস্য হয়ে তিনি রাতারাতি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন।
দুদকে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, সিরাজুল ইসলামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কামারপাড়ায়। ঢাকার কাস্টম হাউসের অফিস সুপার পদে কর্মরত সিরাজ অবৈধ আয়ে মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগে ৪১/১ নম্বর প্লটে থাকা দোতলা বাড়িটি জমিসহ ৩ কোটি টাকায় স্ত্রী রুমা আক্তারের নামে ক্রয় করেন। এ ছাড়া উত্তর পীরেরবাগের ৪২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়ে ১২০০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট স্ত্রীর রুমা আক্তারের নামে ক্রয় করেন। একই এলাকার ৪১/২ নম্বর বাড়ির ১০০০ বর্গফুট আয়তনের আরও একটি ফ্ল্যাট ৭০ লাখ টাকায় ক্রয় করেন স্ত্রীর নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে উত্তর পীরেরবাগ ৪২/১ নম্বর সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় (পশ্চিম পাশ) ১৪০০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। একই ভবনের দ্বিতীয় তলার পূর্বপাশের ফ্ল্যাট ক্রয় করেন নিজের (সিরাজুল ইসলাম) নামে। এ দুটি ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সিরাজুল ইসলাম নিজের নামে একটি ফ্ল্যাট ছাড়া সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন স্ত্রীর নামে। সিরাজুল ইসলাম নিজের নামে ৭৫ লাখ টাকার আর স্ত্রীর নামে সোয়া ৫ কোটি টাকাসহ মোট ৬ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের বাইরেও তার স্ত্রী ও ছেলের নামে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক-ব্যালেন্স, স্বর্ণালংকার, গাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ করে রাখেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গত ২ জুলাই বিকেলে কাস্টমস সুপার সিরাজুল ইসলামের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দেওয়া হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে ফোন কেটে দেন। এরপর গতকাল রোববার তার হোয়াটসআপে মতামত জানতে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে কাস্টমস সুপার সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী রুমা আক্তারকে কল করা হলে তিনিও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
মন্তব্য করুন