বিদ্যুৎ খাতে মার্কিন ডলার ছাড় করা শুরু হলেও সংকটের সমাধান এখনই হচ্ছে না। বরাদ্দ ও ছাড় করা ডলার দিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে বকেয়া বিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানিতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলস্বরূপ জ্বালানি সংকটে গত ৩০ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে হঠাৎ করেই আগের চেয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (অর্থ) সেখ আকতার হোসেন কালবেলাকে বলেন, বকেয়া পরিশোধে ডলার ছাড় করা শুরু হয়েছে, এটা স্বস্তির খবর; কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী আমরা ডলার পাচ্ছি না। এখন প্রাপ্ত ডলার দিয়ে বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। আবার নতুন বিল যোগ হয়ে বকেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে দেওয়া এক প্রতিবেদনে পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি বিল, আমদানি করা বিদ্যুতের বিল ও ঋণ পরিশোধে প্রয়োজন ৩৮৭ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে জ্বালানি ক্রয় ও বিল পরিশোধের জন্য প্রয়োজন হবে ৩৭৬ কোটি ডলার। আর পিডিবির নিজস্ব ঋণ পরিশোধে লাগবে ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ হিসাবে দৈনিক ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডলার প্রয়োজন। গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে জ্বালানি খাতে জন্য ২ কোটি ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য ৪ কোটি মার্কিন ডলার। আর দুই খাত মিলিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২৪০ মিলিয়ন বা ২৪ কোটি ডলার ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ বরাদ্দে সংকট সমাধান হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, লোডশেডিং মুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গেল অর্থ বছরেরর জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ ছিলো ৯৭ দশমিক ৭ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮৯ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে কয়লা ও ফার্নেস অয়েল আমদানির জন্য সদ্য সমাপ্ত জুলাইয়ের জন্য ৪৯৪ মিলিয়ন, চলতি মাসে ৫১৩ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ৫০১ মিলিয়ন, অক্টোবরে ৪৯৩ মিলিয়ন, নভেম্বরে ৩৭৮ মিলিয়ন এবং ডিসেম্বরে ৪০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া বিগত মাসের বকেয়া রয়েছে ৯৭৭ মিলিয়ন ডলার।
পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং কয়লা আমদানিতে প্রয়োজন হবে ১২৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসের কয়লা আমদানির জন্য ৯৭ মিলিয়ন, ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ২৪১ মিলিয়ন এবং ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বিল ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। আগস্টে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ ২৩৩ মিলিয়ন, কয়লার বিল বাবদ ১১২ মিলিয়ন এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বাবদ ১৫৬ মিলিয়ন ডলার লাগবে। অক্টোবরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ ২২১ মিলিয়ন ডলার, কয়লার বিল বাবদ ১১৬ মিলিয়ন এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বাবদ ১৫৬ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। নভেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ ১১৬ মিলিয়ন, কয়লার বিল বাবদ ১১২ মিলিয়ন এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বাবদ ১৫০ মিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ ১২০ মিলিয়ন, কয়লার বিল ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে আমদানির বিল বাবদ প্রয়োজন হবে ১৪৬ মিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে গত জুন পর্যন্ত কয়লা আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের কিস্তির মধ্যে সদস্য সমাপ্ত জুলাইয়ে পিডিবির ইসিএ (এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি) ঋণের কিস্তি রয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ১২ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ১৭ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২২ মিলিয়ন, নভেম্বরে সাত মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ৩০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ঋণের কিস্তিতে লাগবে ১১২ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে, কয়লা বিল পরিশোধ করতে না পারায় পুনরায় বন্ধ হয়ে গেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর ফলে দেশে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এমনকি রাজধানীতেও মধ্যরাতে লোডশেডিং হচ্ছে। গতকাল দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।
পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক কেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বা পুরোপুরি বন্ধ আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তাপমাত্রার বৃদ্ধি। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় রামপাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে।
মন্তব্য করুন