পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়ুয়ার স্ত্রী অভি বড়ুয়াকে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্য দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৪তম সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তে এ কমিটি গঠন করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনী বোর্ড চলাকালে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও নিয়োগ বোর্ডের তথ্য বাইরে প্রকাশ করায় শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫৪৪তম সভার ৩২তম সিদ্ধান্ত ‘ঘ’-এর দ্বিতীয় অংশে বলা হয়, পালি বিভাগের সভাপতি শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন নির্বাচনী বোর্ডের একজন সদস্য হয়ে নির্বাচনী বোর্ড চলাকালীন অসৌজন্যমূলক আচরণ করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংক্রান্ত গোপনীয় তথ্যাদি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে তদন্ত করা হোক। তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য উপাচার্য মহোদয়কে ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, সিন্ডিকেটের উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এবং উপাচার্যের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উপাচার্য বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুককে আহ্বায়ক, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে সদস্য ও সহকারী প্রক্টর হাসান মুহাম্মদ রোমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে কমিটিতে।
গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার স্বাধীনতা একজন নিয়োগ বোর্ডের সদস্যের আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইন বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, অনিয়মের বিরোধিতা করে গণমাধ্যমে তথ্য তুলে ধরার অধিকার একজন শিক্ষকের রয়েছে। ৭৩-এর অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের মতপ্রকাশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। পালি বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার সুযোগ নেই। তিনি যৌক্তিকভাবে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেছেন। শিক্ষকদের এমনই হওয়া উচিত। যেখানে অনিয়ম হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে এ বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি আসেনি। এলে বলতে পারব।
এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্ত গোপনীয়। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার সুযোগ নেই। কারও যদি দ্বিমত থাকে, তাহলে তিনি তার সিদ্ধান্ত প্রশাসনকে জানাবেন। এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে পারেন না তিনি। তা ছাড়া শাসনানন্দ বড়ুয়া রুপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত নিয়োগ বোর্ডের সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। সেজন্যই সিন্ডিকেট তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিয়োগ বোর্ডের অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার নিয়ম আছে কি না—জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমেদ কালবেলাকে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি বলেন, এ রকম একটা নিয়ম হয়তো আছে। আমি এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।
যোগাযোগের জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন