রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নতুন সরকার দায়িত্ব নিলেও নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। সরবরাহ, সংকট, অতিবৃষ্টি এবং নানা অজুহাতে শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাজারে লাগামহীন। অতি মুনাফালোভী মজুতদার ও সিন্ডিকেটের কাছে বাজার সংশ্লিষ্টরাও অসহায়। এ কারণে সরকার দফায় দফায় নানা পদক্ষেপ নিয়ে অভিযান চালালেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, টিকে থাকার যুদ্ধে মধ্যবিত্তরাও পিছিয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, চলছে অভিযানও। তবে এখনো বাজারে স্বস্তি নেই। কিছু কিছু জিনিসের দাম পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বাজার বা পাড়া-মহল্লায় কমেনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর লালবাগ বউবাজার, পলাশী, হাতিরপুল, নিউমার্কেট, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচ ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে।
ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর সুফলও দেখা যাচ্ছে বাজারে। কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম। তবে ডিমের দাম কমলেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেশ আলোচনায় ছিল ডিম। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ডিম আমদানি করায় বড় বাজারে ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ১৬০-১৭০ টাকায়। ডিমে শুল্কছাড়, আমদানির অনুমতি এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আরও সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে মাসখানেক ধরে উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজার খানিকটা কমতির দিকে। যদিও এখনকার দাম সাধারণ ক্রেতাদের জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে কয়েক দিন আগে রাজধানীর বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে দাম কমে এখন খুচরায় ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ কয়টি পণ্যের দাম কমা ছাড়া বাকি সব সবজি চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
শাকসবজি: করলা ১২০, ছোট করলা ১১০, বরবটি ১০০, শসা ৮০, টমেটো ১৬০, পেঁপে ৪৫ থেকে ৫০, কাঁকরোল ১০০, দেশি গাজর ১৬০, ঢ্যাঁড়শ ৯০, চিচিঙ্গা ১০০, ঝিঙা ৯০, কচুরমুখী ৭০, পটোল ১০০, ধুন্দল ১০০, লম্বা বেগুন ১২০, থালি বেগুন ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে লেবুর হালি ৪০ থেকে ৪৫, কলার হালি ৫০, আলু ৬০, পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০, রসুন ২৩০ এবং আদা ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে লাউশাক ৫০, পালংশাক ৫০, পুঁইশাক ৫০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি ডজন ডিম ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা তিন দিন আগে ছিল ১৮০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২১৫ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামে কেজিপ্রতি পার্থক্য দেখা গেছে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত।
চলতি সপ্তাহে তেল ও চিনিতে শুল্কছাড় দিয়েছে নতুন সরকার। কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, শুল্ক কমানোর খবরে পাইকাররা তেল ও চিনির দরে কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন। তবে ভোক্তারা শুল্কছাড়ের সুফল পেতে কিছুদিন সময় লাগবে। চিনির দর নতুন করে বাড়েনি। বরং এক সপ্তাহে পাইকারিতে বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকার মতো কমেছে। দু-তিন দিনের মধ্যে এসব পণ্যের খুচরা দাম কমে আসবে আশা করা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান সংকটের মধ্যেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে জোর দেওয়া উচিত। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক কমানো হলে দাম কমবে। ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু হয়েছে। ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া, চাঁদাবাজি রোধে নানা উদ্যোগ, টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো এবং পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরও বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের দোকানি ইউনুস মিয়া কালবেলাকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচ ছাড়া কোনো সবজির দামই কমেনি। আমরা বেশি দামে কিনি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। নতুন করে কাঁচামরিচের দাম কমে এখন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর পলাশী কাঁচাবাজারের (বুয়েট) দোকানি আব্দুল খালেক বলেন, অতিবৃষ্টি ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন কমেছে। এতে সৃষ্ট সবজি সংকটে দাম বাড়তি। সামনে শীত আসছে, তখন সবজির দাম কমবে।
এর আগে যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, হার্ডলাইনে না গেলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হবে। একের পর এক চ্যালেঞ্জ ফেস করছি। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে অনেক কিছুই জড়িত। পণ্যের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের বড় প্রভাব রয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে কাজ করছি। কিন্তু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনকে দুর্বল করা হয়েছে। করপোরেটদের সঙ্গে আগের সরকারের যোগাযোগ থাকার কারণে এটিকে এত দুর্বল করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন আসে, অভিযান চালিয়ে তাদের ৩ হাজার টাকা, ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এটা তো ইফেক্টিভ না।
আর্কাইভ 
| ০৬ জুন ২০২৫ 