কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০২:৩৪ এএম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক ঋণের চার ভাগের এক ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
ব্যাংক ঋণের চার ভাগের এক ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ

দেশে ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে আছে।

এ ছাড়া বকেয়া পুনঃতপশিল করা ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ও বকেয়া পুনর্গঠিত খেলাপি ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকাও ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। ব্যাংকিং খাত যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা এই চিত্র দেখেই বোঝা যায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময় প্রতিবছর জুন মাসে বার্ষিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের তথ্য প্রকাশ করত। তবে মাঝে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণচুক্তিতে শর্ত আবারও ওই প্রতিবেদন প্রকাশের তাগিদ দিয়েছে। সংস্থাটির শর্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তথ্যও দিতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তা নীতিমালার মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। যেহেতু এই নীতিগুলো প্রত্যাহারের কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার লোকসান ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে পারে। সম্পদের শ্রেণীকরণ, বিশেষ করে পুনর্গঠিত ঋণগুলোর কথা বর্তমান ব্যালেন্স শিটে সঠিকভাবে দেখানো উচিত ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের তথ্য হিসাবে যুক্ত করা প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা সম্পদের প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথাও বলেছে আইএমএফ। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মধ্যে আছে শ্রেণিকৃত ঋণ, পুনঃতপশিল করা ঋণ, অবলোপন করা ঋণের পুনর্গঠিত অংশ ও আদালতের আদেশে শ্রেণিকৃত নয় এমন ঋণ। এই চার শ্রেণির ঋণই একটি ব্যাংকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং সেগুলোর যথাযথ প্রভিশন প্রয়োজন।

গত জানুয়ারিতে আইএমএফ কর্মকর্তা পর্যায়ের (স্টাফ) রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কভিড-১৯ আর্থিক সহায়তা নীতিমালার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। যেহেতু এই নীতিগুলো শিথিল করায় ব্যাংকিং ব্যবস্থার লোকসান ধীরে ধীরে উঠে আসতে পারে, তাই সম্পদের শ্রেণিবিন্যাস, বিশেষ করে পুনর্গঠিত ঋণের বর্তমান ব্যালেন্স শিটের ঝুঁকিগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরা উচিত। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ যথাযথভাবে প্রকাশ করা উচিত।

আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্যই সম্প্রতি আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের সম্পদের গুণগতমানে সামান্য অবনতি হয়েছে। কেননা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। বছর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বকেয়া ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল। এটি আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়মিত ও পুনঃতপশিলকৃত বা পুনর্গঠিত ঋণের যথাযথ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের গতি ব্যাংকিং শিল্পের সম্পদের মান উন্নত করতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক ঘটনার কারণে ব্যবসায় ধীরগতির পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এটি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সম্পদের গুণমানকে নেতিবাচক করে দিতে পারে। মহামারির সময় চালু করা ঋণ স্থগিতের সুবিধা বাতিল হওয়ায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ঋণ পুনঃতপশিল করা হয়েছে। ২০২২ সালে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতপশিল করা হয়। এটি আগের বছর ছিল ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের শেষে পুনঃতপশিল করা ঋণের ২০ শতাংশ ঋণ আবারও খেলাপি হয়ে গেছে।

ব্যাংক খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এটি নতুন কোনো সমস্যা নয়, দীর্ঘদিনের সমস্যা। সেটিই এখন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাবে বিতরণ করা ঋণ, পরিচালকদের সমঝোতার ভিত্তিতে একে অন্যের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া, মামলায় আটকে থাকা অনাদায়ী ঋণ ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ঢালাওভাবে ঋণ পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো ঋণ পুনঃতপশিল করেছে।

এ বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোরভাবে ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ঋণখেলাপিদের জামানত বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং আইনি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

মাছ চাষের নামে বাঁধ, পানির তলে শত বিঘা আমন ধান

ঘরে বসেই ঘন ও স্বাস্থ্যবান চুল পেতে মেনে চলুন এই ৭ টিপস

সুস্থ সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা 

বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি

জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মীকে হত্যা, আ.লীগ নেতা মানিক গ্রেপ্তার

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার পলক-আতিক, রিমান্ডে কিরণ

কক্সবাজারে মাহিন গ্রুপের ২ সদস্য অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

ভক্তদের চমকে দিলেন হানিয়া আমির

রক্তের দাগ অনুসরণ করে মিলল অটোচালকের মরদেহ

১০

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশার ঘনত্ব জরিপ গতিশীল হোক

১১

ডাকসুর পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা ছাত্রদলের

১২

জুলাই হত্যাযজ্ঞ / পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদের জামিন স্থগিত, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

১৩

বিল বেশি আসায় লাইনম্যানকে ‘মারধর’, মিটার খুলে নিল বিদ্যুৎ অফিস

১৪

নেদারল্যান্ডস সিরিজ খেলবেন না মিরাজ

১৫

ভয়াবহ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ অনুমোদন, গাজার পথে ৬০ হাজার ইসরায়েলি সেনা

১৬

রাতের আঁধারে সরকারি ৩০০ বস্তা সার আটক

১৭

'ওয়ার ২'-এর সাফল্যের মাঝে প্রিয়জন হারালেন জুনিয়র এনটিআর

১৮

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে ‘পেছনে’ ফেলে ইতিহাস সালাহ’র

১৯

তেরোখাদায় পারভেজ মল্লিকের রাজনৈতিক কার্যালয় উদ্বোধন

২০
X