ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি নিশাদ। এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ জ্বর আসে আবার কমে যায়। এরপর লালবাগ ইবনে সিনায় একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। তার জ্বর ও লক্ষণ দেখে গত মঙ্গলবার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ এনএস-১ পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রিপোর্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। স্বস্তি নিয়ে বাসায় ফিরলেও বুধবার আবার প্রচণ্ড জ্বর আসে নিশাদের। বমির সঙ্গে আসে রক্তও। তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিলে সিবিসি টেস্টের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রিপোর্টে দেখা যায়, তার প্লাটিলেট ১৪ হাজারে নেমে গেছে। অথচ এনএস-১-এর রিপোর্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ এসেছিল।
এমন চিত্র একটি নয়। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা নাহিদ ও আশা দম্পতির তিন বছরের শিশু তাসফিয়াও একই পরিস্থিতির শিকার। হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পর সুস্থ হলে এরপর থেমে থেমে জ্বর আসে। চার দিন জ্বরের পর এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। পরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তির পর সিবিসি পরীক্ষায় তার প্লাটিলেট ৩৪ হাজারে নামার তথ্য আসে। গত বৃহস্পতিবার তারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অনেকের ক্ষেত্রেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এনএস-১ পরীক্ষা মূলত ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার বা লক্ষণ দেখা দেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে এটি ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারে। এরপর এটি আর কার্যকর হয় না। পঞ্চম দিন থেকে এনএস-১ নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। আবার কোনো দেশের পরীক্ষা শতভাগ সঠিক ফলাফল দিতে পারে না। প্রায় ৮০ ভাগ সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু নেগেটিভ হলেও তাদের সিবিসি পরীক্ষা করা দরকার।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আব্দুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পাঁচ দিনের বেশি হয়ে গেলে আর এনএস-১ পরীক্ষা করে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম, আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট করতে হবে। এ ছাড়া রক্তের অন্য পরীক্ষা সিবিসি এবং ইএসআর-ডেঙ্গু পজিটিভ আসার পর এই পরীক্ষাগুলো এক দিন পরপর করতে হয়। কারণ প্লাটিলেটের এবং ডব্লিউবিসি বা শ্বেত-রক্তকণিকার কম-বেশি দেখে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনুমান করা হয়। রোগীর ডেঙ্গু থেকে উন্নতি হচ্ছে কি না, এই টেস্ট করে ধারণা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি: ডেঙ্গুতে এক দিনে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ১ হাজার ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০৪ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬১ জন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭ হাজার ৫৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৬২৩ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৯৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ৪৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্তব্য করুন