বীর সাহাবী
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩০ এএম
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিনিয়োগকারীরা বহুজাতিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন

পুঁজিবাজার
বিনিয়োগকারীরা বহুজাতিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার পাশাপাশি পুঁজির নিশ্চয়তা পেতে বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ করেন। ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির তালিকাতেও সবার ওপরে থাকে এগুলোই। দীর্ঘমেয়াদে যারা বিনিয়োগ করেন তাদেরও ভরসা বহুজাতিক কোম্পানি। ফলে এসব কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিকের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরও আগ্রহ থাকে। তবে এবার সেই আস্থার বহুজাতিক কোম্পানিও হতাশা বাড়াচ্ছে পুঁজিবাজারে। গত ৬ মাসে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিরই দর কমেছে ব্যাপক হারে। এ ছাড়া বিদেশিরাও শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন আশঙ্কাজনক হারে।

তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইতে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে ১৩টি। এগুলো হচ্ছে রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার, বাটা সু, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস, লিন্ডে বিডি, সিঙ্গার বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিম, আরএকে সিরামিকস, রবি এবং হাইডেলবার্গ।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্দোলনের কারণে গত জুলাই-আগস্টে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। অনেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের। ফলে বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সেদিকেই ঝুঁকছেন। এতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালবেলাকে বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদির চেয়ে দৈনিক বিনিয়োগে বেশি বিশ্বাসী। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোয় বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা দেখছি যে, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিদেশিরা তাদের বিনিয়োগ তুলে নেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকা ছিল। তাই এক জায়গায় স্থির ছিল। এখন যেটা হচ্ছে তা সংশোধন বলা যেতে পারে। কোনো শেয়ার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সংশোধন হয়েছে। এখনই এসব শেয়ারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।

আগস্টে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অস্বাভাবিক লেনদেন ডিএসইর তথ্য বলছে, গত বছরের শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার লেনদেন করেন ৩০৬ কোটি টাকার। অন্য মাসগুলোয় তা উঠানামা করে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ৩৬৯ কোটি টাকার, মার্চে ২৮৭ কোটি, এপ্রিলে ১৬৪ কোটি, মে মাসে ১৬৯ কোটি, জুনে ২৪০ কোটি এবং জুলাইয়ে ২৬২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তবে আশ্চর্যজনকভাবে অস্বাভাবিক গতি লক্ষ করা যায় আগস্ট মাসে। ওই মাসে লেনদেনের পরিমাণ ৮১২ কোটি টাকা, যা গত বছর রেকর্ড লেনদেন। মূলত জুলাই আগস্টে অস্থিরতার কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ তুলে নেন। এরপর সেপ্টেম্বরে তা এক ধাক্কায় নেমে যায় ৩৩৭ কোটিতে। অক্টোবরে আরও কমে ১৫৮ কোটিতে, নভেম্বরে ৩৬৫ কোটি আর শেষ মাস ডিসেম্বরে তলানিতে নেমে পৌঁছায় ১৭০ কোটি টাকাতে। এরপর চলতি বছর প্রথম মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ কোটি টাকায়।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ার অনেক বেশি সংশোধন হয়ে গেছে। ভারতে প্রতিটি বহুজাতিক কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবেই তালিকাভুক্ত হতে হয় ব্যবসা করতে চাইলে। আমাদের দেশে অনেক কোম্পানি ব্যবসা করছে; কিন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। সরকারকে বারবার এ ব্যাপারে বলেছি। তালিকাভুক্ত হয়ে কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশের ন্যূনতম ৫০ বা ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ যদি ভাগাভাগি করে তাহলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এজন্য আমাদের দেশেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৬ মাসে সব বহুজাতিকের শেয়ার দর কমেছে তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৬ মাসে অর্থাৎ আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম টানা কমেছে। এর মধ্যে রেকিট বেনকিজারের শেয়ার দাম ছিল ৪ হাজার ৯৬৫ টাকা। কমতে কমতে ১১ ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৩ টাকায়। সে হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৮৭২ টাকা। একই অবস্থা ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের। কোম্পানিটির শেয়ার আগস্টে ছিল ৩ হাজার ২৩১ টাকা। এই শেয়ারের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ টাকায়। মোট কমেছে ৬৭৭ টাকা। বাটা সুর দাম ছিল ৯৫৫ টাকা, যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬০ টাকায়। ম্যারিকো বাংলাদেশের শেয়ার কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬৫ টাকায়। ব্রিটিশ আমেরিকানের শেয়ার ছিল ৪৩০ টাকা। কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ টাকায়। এ সময়ে শেয়ারটি কমেছে ৮৪ টাকা। বার্জার পেইন্টসের শেয়ার ছিল ১ হাজার ৮৬০ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০৮ টাকায়। এ সময়ে দাম কমে ৫২ টাকা। লিন্ডে বিডির শেয়ার দর ছিল ১ হাজার ৫৪৭ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ৯৮০ টাকায়। সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার দর ছিল ১৫১ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ১০০ টাকায়। এ সময়ে শেয়ারটির দর কমেছে ৫১ টাকা। গ্রামীণফোনের শেয়ার দর কমে দাঁড়ায় ৩৩৭ টাকায়। এ সময়ে শেয়ারটির দর কমেছে ৪২ টাকা। লাফার্জ হোলসিমের শেয়ার দর ছিল ৬৭ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ৪৯ টাকায়। আরএকে সিরামিকসের শেয়ার দর ছিল ২৯ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ২৩ টাকায়। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারটির দর কমেছে ৬ টাকা। রবির শেয়ার দর কমে দাঁড়ায় ২৮ টাকায়। হাইডেলবার্গের শেয়ার দর ছিল ৩৫৯ টাকা, তা কমে দাঁড়ায় ২১০ টাকায়। এ সময়ে শেয়ার দর কমে ১৪৯ টাকা।

যে কারণে বাড়ছে না বহুজাতিকের তালিকাভুক্তি বাংলাদেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র ১৩টি কোম্পানি। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) সর্বশেষ নিবন্ধন পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে-বিদেশি কোম্পানির (লিয়াজো অফিসসহ) সংখ্যা রয়েছে ১১৯৬টি। তাদের মধ্যে বড় মূলধনি কোম্পানিও রয়েছে বেশ কিছু। যেগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজারের মূলধন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে এসব কোম্পানিকে কোনোভাবেই বাজারে তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তালিকাভুক্তির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্তি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বড় বাধা তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান। বর্তমানে এ ব্যবধান ৫ শতাংশ।

এ ব্যাপারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের সময় অনেক কোম্পানির তারল্য কম ছিল। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর দর সংশোধন হয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার সূচকে বড় ভূমিকা রাখে। ফলে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে সূচক অনেক নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে বহুজাতিকসহ বিভিন্ন মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অনেকটা অবমূল্যায়ন পর্যায়ে। কিছু ক্ষেত্রে ফেয়ারভ্যালুর থেকেও মার্কেট প্রাইস অনেক কম। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিনিয়োগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বহুজাতিকের তালিকাভুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, এখনো যেগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি, তাদের ব্যাপারে যেসব পলিসি সাপোর্ট দরকার তা কমিশন নিচ্ছে। বিশেষ করে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির যে কর হারের ব্যবধান তা বাড়ানোর জন্য কমিশন কাজ করছে। আগামী বাজেটে এসব ব্যাপারে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জন্মাষ্টমী : সাংবাদিকদের সাথে পূজা পরিষদের মতবিনিময় বৃহস্পতিবার

রাহুল গান্ধীকে হত্যার হুমকি

সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে

স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড

ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু

অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস 

চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু

১০

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

১১

আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু

১২

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

১৩

জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী

১৪

বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

১৫

সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা

১৬

সাদা পাথর বাঁচাতে ৫ দফা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে বার্সা-ভিয়ারিয়ালের ম্যাচ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের আপত্তি

১৮

টঙ্গীতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৫

১৯

গলায় চানাচুর আটকে শিশুর করুণ মৃত্যু

২০
X