অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুধু বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন। হাজারো পাঠক-লেখকের মিলনস্থল, আড্ডা, সাহিত্য আলোচনা আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টল ঘোরাঘুরির মাঝে ক্ষুধা লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবারের বইমেলায় খাবারের দাম দেখে হতাশ অনেকেই। মেলার ভেতরে থাকা খাবারের স্টলগুলোতে সাধারণ খাবারও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। বাজারের তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিরিয়ানি, ফুচকা, স্যান্ডউইচ, রোলসহ অন্যান্য খাবার। এমনকি বোতলজাত পানীয় পর্যন্ত বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। ফলে অনেকেই খাবার কেনার আগে কয়েকবার ভাবছেন, কেউ বা বাইরে গিয়ে খেয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। অন্যদিকে, খাবারের বেচাবিক্রি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন দোকান মালিকরাও। তারা জানিয়েছেন, কাঙ্ক্ষিত বিক্রি না হওয়ায় দোকানের খরচ তুলতেই তাদের হিমশিম অবস্থা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিন দেখা গেছে, এবারের মেলায় প্রায় ২৫টি বড় খাবারের স্টল বসানো হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক আইসক্রিম, মোমো, ফুচকা ও ঝালমুড়ির দোকান। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকায় বিক্রেতাদের মুখে হাসি নেই। খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে ওমুখো হচ্ছেন না ক্রেতারা।
যেমন চিকেন বিরিয়ানির দাম। বাজারে ৮০-৯০ টাকা হলেও মেলায় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। ১৫ টাকার ভেজিটেবল রোলের দাম রাখা হচ্ছে ২৫ টাকা। ৩০ টাকার স্যান্ডউইচ ৫০ টাকা। চটপটি ও ফুচকার প্লেট
বাইরে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। মেলায় নেওয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। ৬০০ মিলি স্প্রাইট ৩২ টাকার বোতল বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
বইমেলায় খাবারের দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সলিমুল্লাহ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী চারটি লুচি-পরোটা ও দুই প্লেট হাঁসের মাংস খেয়ে বিল দিয়েছি ৫৩৬ টাকা। লুচির দাম সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ টাকা হওয়া উচিত, কিন্তু এখানে নেওয়া হচ্ছে ২৪ টাকা করে। আর ২২০ টাকার হাঁসের মাংসের প্লেটে মাত্র ছোট চার টুকরো মাংস—এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
বইপ্রেমী সুমাইয়া রুবিনা কালবেলাকে বলেন, বইমেলায় দীর্ঘ সময় কাটাই, ফলে খিদে লাগতেই পারে। কিন্তু খাবারের দোকানগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে। মেলায় আসা মানুষের জন্য যদি একটু বেশি সুবিধাজনক করা যেত, তাহলে ভালো হতো।
সোনারগাঁ পিঠাঘরের মালিক ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ কালবেলাকে বলেন, আমাদের দোকান সব সময় মন্দিরের সামনেই থাকে। বইমেলা কেন্দ্র করে এবারও বিশেষভাবে সাজিয়ে নিয়েছি। তবে আমরা খাবারের দাম বাড়াইনি, আগের মতোই রাখার চেষ্টা করেছি। খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে কাগজের প্যাকেট ব্যবহার করছি, যাতে পরিবেশবান্ধব হয়। এবারও নিয়মিত ক্রেতারা আসছেন, তবে দাম আরেকটু কমালে হয়তো ভিড় আরও বাড়ত। কিন্তু তাতে আমাদের জন্য লোকসানের ঝুঁকি থাকত। আমরা ন্যায্যমূল্যে খাবার বিক্রি করছি, তাই ক্রেতাদেরও কোনো অসন্তোষ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজীব রহমান বলেন, প্রতি বছরই বইমেলায় আসি, ঘোরাঘুরির মাঝে কিছু খেয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এবার খাবারের দাম এত বেশি যে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। একটা সাধারণ খাবারের দাম রেস্টুরেন্টের চেয়েও বেশি রাখছে দোকানগুলো। ফলে অনেকেই বাইরে গিয়ে খেয়ে আসছেন।
মুখরুচি কাবাব ঘর স্টলের মালিক নাসিরুদ্দিন কালবেলাকে বলেন, বিক্রি নেই বললেই চলে। সাড়ে ১০ লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে তিনটি দোকান নিয়েছি, কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে স্টাফদের বেতন ও মালপত্র কেনার খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, কোনোভাবে মূলধন তুলে নেওয়ার দিকেই এখন নজর দিতে হচ্ছে।
বইমেলার ভেতরের স্টলগুলোর মতোই বইমেলা এলাকার আশপাশের দোকানগুলোতেও খাবারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। মেলা কেন্দ্র করে আশপাশের হোটেল, খাবারের দোকান ও অস্থায়ী ফুড স্টলগুলো চড়া দামে খাবার বিক্রি করছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা। এ ছাড়া খাবারের মান নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। অনেকেই বলছেন, কিছু দোকানে নষ্ট খাবার বিক্রি করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।