চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা, হত্যাচেষ্টা, নাশকতাসহ বিভিন্ন ঘটনার মামলায় এজাহারনামীয় আসামিদের অনেকে ছয় মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। অনেকে বলছেন, হামলাকারীদের অনেককে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে দেখেছেন।
তবে পুলিশের ভাষ্য, ছাত্র আন্দোলনে হামলা, নাশকতা, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র সরবরাহসহ নানা অভিযোগে দায়ের মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম মেট্র্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে সংরক্ষিত ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে শনাক্ত করে অনেককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নগর পুলিশের তথ্যমতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় সিএমপির থানাগুলোতে ৫৪টি মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানায় মামলার সংখ্যা বেশি। এখন পর্যন্ত ৬০০-এর বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে মুরাদপুর, বহদ্দারহাটে ছাত্র আন্দোলনের ওপর অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করা যুবলীগ ক্যাডারও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এখনো সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ অভিযান ও ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেপ্তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন থানার এজাহারনামীয় আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন। নিউমার্কেটে ছাত্র আন্দোলনে হামলা করতে অস্ত্র সরবরাহকারী সাবেক যুবলীগ নেতা মোস্তফা কামাল টিপুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করছেন কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহারনামীয় আসামি জিনাত সোহানা। তিন মামলায় এজাহারনামীয় আসামির সঙ্গে ভ্রমণ করছেন পুলিশ সদস্য। বর্তমানে ডেভিল হান্ট অভিযানে মামলায় অভিযুক্ত রাঘববোয়ালদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের মধ্যে অনেকে চট্টগ্রাম ছেড়েছেন এবং অনেকে আত্মগোপনে আছেন।
সরকার গঠিত কমিটির খসড়া প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সংঘাত-সহিংসতায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৬২২ জন। এই সংখ্যা হাসপাতাল থেকে নেওয়া। আন্দোলনের সময় নিহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়নি। তাই প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।
নগর পুলিশের ভাষ্য, সবাইকে যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা নয়। এজাহারনামীয় আসামি না হলেও ঘটনার তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরও আটক করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ক্রাইম) রইছ উদ্দিন বলেন, এখন সারা দেশে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’-এর কার্যক্রম চলছে। দেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চায়, অবৈধ অস্ত্রধারী এসব বিষয়ের সবই যে সন্ত্রাসবিরোধী, তা না। এখানে অনেক বিষয় আছে। বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামি বা মামলার তদন্তে জড়িতরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। এর বাইরে চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার আওতায় পড়ে।
তিনি বলেন, কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে হলে কোনো না কোনো আইনে করতে হয়। অর্থাৎ যে আইনে যে অপরাধ কাভার করে তাকে সেই আইনে দিতে হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় রুজু হওয়া মামলায় এজাহারনামীয় আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে, তা দুদিন আগে বা পরে। পুলিশ সব বিষয়ে সচেতন ও সক্রিয় রয়েছে।