দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার দুয়ার খুলেছে। সব মানুষের কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে দেশে প্রথমবারের মতো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালন নীতিমালার। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মো. আবুল বশর কালবেলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এ সভায় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভাপতিত্ব করেন। এ সময় পর্ষদ সদস্য ছাড়াও ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সদ্য অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে পরিচালনার জন্য প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪-এর বিধান অনুযায়ী পরিশোধ সেবা পরিচালনা করতে হবে। এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদনের জন্য ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকার মূলধন থাকতে হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের প্রাথমিক ন্যূনতম আদায়কৃত মূলধন আবেদনকারী ব্যক্তি বা উদ্যোক্তারা সরবরাহ করবেন। প্রত্যেক স্পন্সরের ন্যূনতম শেয়ার ধারনের পরিমাণ হবে ৫০ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ শেয়ার ধারনের পরিমাণ সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনে কমানো যেতে পারে।
নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা থাকবে না। প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল ব্যাংক শুধু সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ করবে। যার কার্যক্রম কোনো শাখা উপশাখা, উইন্ডো এজেন্ট বা নিজস্ব কোনো এটিএম, সিডিএম, সিআরএম থাকবে না। এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ, ঋণ আবেদন ও ঋণ অনুমোদন সব কিছুই হবে অনলাইনভিত্তিক। এতে ভুয়া ও বেনামি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত সহজ হবে। প্রকৃত ঋণগ্রহীতা দ্রুত ঋণ নিতে পারবেন। লেনদেনের জন্য কোনো ধরনের স্পর্শযোগ্য ইন্সট্রুমেন্ট ইস্যু করতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ এবং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে মেয়াদি ঋণ ব্যতীত অন্যান্য খাতে অর্থায়ন বা ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও বিভিন্ন ফি বা চার্জ গ্রহণ সবই হবে অ্যাপভিত্তিক। তবে গ্রাহকের ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন্স অনুসরণ করবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের শক্তিশালী, পরিশীলিত, পরিচালনাযোগ্য আইসিটি অবকাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে।
এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একই পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না। ব্যাংক পর্ষদে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সদস্যের প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাকি সদস্যদের ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাকিং আইন ও রেগুলেশন ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নির্দেশনা ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকিং নীতিমালায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে আইপিওর পরিমাণ স্পন্সরদের সরবরাহকৃত প্রাথমিক মূলধনের তুলনায় কম হবে না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমান ঋণখেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। উদ্যোক্তাদের শেয়ার ব্যাংক ব্যবসা শুরু করার পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া হস্তান্তর করতে পারবেন না।
ডিজিটাল ব্যাংকিং পরিচালনায় ব্যয় সাশ্রয়ী ও উদ্ভাবনীমূলক ডিজিটাল আর্থিক পণ্য ও সেবায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে এ সেবা সহজ করার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরও বেগবান করার উদ্যোগ থাকছে নীতিমালায়। যেখানে অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
এর আগে, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে প্রসারিত ও ত্বরান্বিত করতে একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মন্তব্য করুন