বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পর্যটন নগরী কক্সবাজার। উপকূলের এই জেলা পরিণত হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে। এরই মধ্যে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। কাজ চলছে আরও বেশ কয়েকটির। ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধাকে কাজে লাগানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে বদলে যাবে কক্সবাজার। বাড়বে রাজস্ব আয়, দূর হবে বেকারত্বের সমস্যা। গতিশীল হবে দেশের পর্যটন শিল্প।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১টি মেগা প্রকল্পসহ প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ছোট-বড় ৬৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৩ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বিকেএসপি, লিঙ্ক রোড থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের সুবিধা পাচ্ছে জনগণ।
সম্প্রতি কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এসে জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, দেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের অর্ধেক হচ্ছে কক্সবাজারে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, আমাদের প্রজন্ম বিদেশে নয়, কক্সবাজারে আসবে চাকরি করতে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর নির্মাণ, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, রেললাইন স্থাপন, হাইটেক পার্ক, নৌবাহিনীর সাব-মেরিন ঘাঁটি নির্মাণ, প্রকল্প ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস নির্মাণ, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, সাবরাং এক্সক্লোভিস জোন, মহেশখালী উপজেলার চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, টেকনাফ জালিয়ার দ্বীপ এক্সক্লুসিভ ‘নাফ ট্যুরিজম পার্ক’ এবং এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চলমান। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। আগামী দুই বছরে এসব প্রকল্পের সুবিধা স্থানীয়রা পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ছোট প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। আর বড় প্রকল্পগুলোর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের চেহারা। এতে অর্থনীতির চাকাও দ্রুত ঘুরবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবাল বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে সরকার ১৩ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। ভূমি মালিকরা অধিগ্রহণের টাকাও পেয়েছেন। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলোরও সিংহভাগ কাজ শেষ। আগামী দুই বছরে এগুলো শেষ হতে পারে।
কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সায়মুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে বড় পরিসরে।
কক্সবাজার মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ২০১৭ সালে সরকার মহেশখালীকে ডিজিটাল আইল্যান্ড ঘোষণা করেছে। আর এখানেই বাস্তবায়ন হচ্ছে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজও শেষের দিকে। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
মন্তব্য করুন