গরমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা চেয়েছে পেট্রোবাংলা। এই টাকা পেলে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চার কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করবে সংস্থাটি। এমন প্রস্তাবে বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোন মাসে কী পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হবে, পেট্রোবাংলার কাছে এর বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। গ্যাস প্রাপ্তির এ তথ্য পাওয়ার পর অর্থ বিভাগের কাছে টাকা চাওয়া হবে। পিডিবি, পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে খরচ কম হবে। আমরা পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাস চেয়েছি। তারা শুধু বিদ্যুতের জন্য এলএনজি আনতে চায়। সেজন্য আমাদের কাছে টাকা চেয়েছে। কখন, কী পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করবে, সেটা আমরা পেট্রোবাংলার কাছে জানতে পেয়েছি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্ম অর্থাৎ চলতি মার্চ থেকে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। এ চাহিদা মেটাতে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৫ হাজার ৫৫৮ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ৪ হাজার ১৪৯ মেগাওয়াট এবং ২ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সবই বেসরকারি খাতে। বকেয়া বিল না পাওয়ায় এসব উদ্যোক্তা জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না। ফলে গ্রীষ্মে ফার্নেস অয়েল চালিত কেন্দ্রগুলো চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও অনিশ্চিত। দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ৩০ এপ্রিল, ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।
এ অবস্থায় গরমের সময় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর ওপরই নির্ভর করতে চাইছে। কারণ এতে খরচ অনেক কম। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ফার্নেস অয়েলনির্ভর কেন্দ্র থেকে উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি আড়াই টাকা কম খরচ হবে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৯৬ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। এই অর্থবছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৭ হাজার ৬০৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রতি কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয় গড়ে ৫৮৭ কোটি টাকা। এক কার্গোতে ২৯ লাখ এমএমবিটিইউ এলএনজি থাকে।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি খাত মিলিয়ে ৩২টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ দিতে না পারার কারণে এসব কেন্দ্র বন্ধ। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে এখন সরবরাহ করছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম। পেট্রোবাংলার গতকালের গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ চিত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ৯৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট। একই দিন জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে ৯১০ মিলিয়ন ঘনফুট।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, এদিন বিকেল ৫টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৯৯ মেগাওয়াট। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে এ সময় দেশের কোথাও কোনো লোডশেডিং হয়নি। এ সময় গ্যাস থেকে ৫ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট, জ্বালানি তেল থেকে ৭৩১ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৪ হাজার ৭৫ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ৪০ মেগাওয়াট, সৌরবিদ্যুৎ থেকে ১০১ মেগাওয়াট, বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ১৫ মেগাওয়াট, ভারত থেকে ভেড়ামারা এইচভিডিসির মাধ্যমে ৯২৩ মেগাওয়াট, ভারতের ত্রিপুরা থেকে ৫৪ মেগাওয়াট এবং ভারতের বেসরকারি খাতের আদানি থেকে ৮৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন