মাজেদ হোসেন, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জুলাই অভ্যুত্থান

শহীদ ফয়েজের মা-বাবা কাঁদছেন আজও

শহীদ ফয়েজের মা-বাবা কাঁদছেন আজও

জুলাই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নিহত লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে শহীদ ফয়েজ আহম্মেদের মা-বাবা আজও কাঁদছেন। আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তাদের দুঃখ, গত ১১ মাসেও ফয়েজের কবরস্থানটি পাকাকরণ ও হায়দরগঞ্জ বাজারে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ করার কথা থাকলেও, তা হয়নি। সম্প্রতি নিহত ফয়েজ আহম্মেদের রায়পুরের চরআবাবিল ইউনিয়নের ঝাউডুগি গ্রামের বাড়ি গেলে ফয়েজের মা-বাবা এ অভিযোগ করেন।

শহীদ ফয়েজের স্ত্রীকে নগদ টাকাসহ একটি সেলাই মেশিন, শিশুসন্তানকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে এবং তা ১৮ বছর পর্যন্ত দেওয়া হবে।

গত ২১ জুলাই কোটাবিরোধীর আন্দোলনের সময় ফয়েজ আহম্মেদ তার মাকে বলেছিলেন, ‘মা অনবরত গুলি হচ্ছে। পরে কথা বলব।’ কিন্তু মায়ের সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি স্যানিটারি মিস্ত্রি ফয়েজ আহম্মেদের (৩১)। ২১ জুলাই সন্ধ্যার আগে ছেলের খোঁজ নিতে ফোন করেন মা সবুরা বেগম। মায়ের ফোন পেয়ে ফয়েজ বলেছিলেন, তিনি ভালো আছেন। কাজ শেষে বাসায় ফিরছেন। তবে প্রচণ্ড গোলাগুলি হচ্ছে। বাসায় গিয়ে পরে কথা বলবেন।

ফয়েজ আহম্মেদ তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তার উপার্জন দিয়েই চলত তাদের সংসার। ফয়েজের স্ত্রী বর্তমানে তিন বছরের শিশুসন্তান নিয়ে ঢাকার টঙ্গীর একটি বস্তিতে বসবাস করছেন। শহীদ ফয়েজের জন্য এখনো কান্না করেন মা সবুরা বেগম ও বাবা আলাউদ্দিন। ছেলের সঙ্গে সেদিনের ফোনের কথা ও অতীতের নানা স্মৃতি তুলে ধরে বিলাপ করেন বৃদ্ধা সবুরা বেগম।

তিনি বলেন, ২১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা বলার সময় মোবাইলে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় গুলির একটি বিকট শব্দের পর ছেলের সঙ্গে তার কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। ছেলেকে হারিয়ে দুচোখে তিনি কেবলই অন্ধকার দেখছেন। কী হবে এখন? ফয়েজের স্ত্রী ও শিশু নাতির কী হবে? কে জোগাড় করে দেবে তাদের মুখের আহার? এসব ভাবতে ভাবতে দিন কাটে তার।

সেদিন পরিচিত স্যানিটারি ঠিকাদার মো. কাশেম গুলিবিদ্ধ ফয়েজ আহম্মেদকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মোবাইল ফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। ফয়েজ তার সঙ্গে দুই বছর ধরে কাজ করছিলেন। দিনে ৭০০ টাকা মজুরি পেতেন। এই আয় দিয়ে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় সাইনবোর্ড এলাকার একটি ভবনে কাজ শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ফয়েজ মাথায় ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মো. ফয়েজ আহম্মেদকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান কাশেম। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রায়পুরের ঝাউডুগী গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়।

ফয়েজের বাবা কৃষক আলাউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুটি গুলি আমার ছেলেটারে শেষ করে দিল! ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমি চট্টগ্রাম পোর্টে চাকরি করতাম। সেনা সরকারের সময় এক আন্দোলনে আমি চাকরি হারিয়েছি। এবার আরেক আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’ নিহত ফয়েজের স্ত্রী ও মেয়ের স্বামীর জন্য একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

নিহত ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী নুর নাহার বলেন, আমি এখন টঙ্গীতে একটি ভাড়া বাসায় তিন বছরের ছেলে রাফি মাহমুদকে নিয়ে থাকি। স্বামী ছিল আমার আশ্রয় ও শেষ সম্বল। কোন দোষে তাকে গুলি করে মারল? দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। সরকার থেকে ৬ লাখ টাকা, একটি সেলাই মেশিন ও ছেলের জন্য মাসে ২০০০ টাকা করে পাচ্ছি।

এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, এখন পর্যন্ত শহীদ ফয়েজ আহম্মেদের পরিবারকে প্রায় ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে এক বান টিন, একটি গরুসহ আরও কিছু সহযোগিতা দেওয়া হয়। তার কবরস্থান পাকাকরণ ও হায়দরগঞ্জ বাজারে তার নামে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ করার কথা রয়েছে। প্রশাসন সবসময় তাদের পরিবারের পাশে আছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের সাবেক দুবারের এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার পতনে ফয়েজ আহম্মেদসহ যারা শহীদ হয়েছেন, সবার পাশে রয়েছে বিএনপি। শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভিন্নরূপে শাকিব খান

তামা না পিতল, প্রতিদিনের ব্যবহারে কোন বাসনটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

‘ট্রাম্প নোবেল না পেলে যে কোনো কিছু করতে পারেন’

শিশু শান্তি ‘নোবেল’ পুরস্কারে মনোনীত সাতক্ষীরার সুদীপ্ত

এই ৪ ভুল করছেন? তাহলে নিজেই ত্বকের ক্ষতি ডেকে আনছেন

শিশুকে হত্যার পর ৭০ ফুট গাছের ওপর ওঠেও রক্ষা পেল না যুবক

মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করে ঘরে বসেই সুগন্ধি পারফিউম তৈরি করবেন যেভাবে

ধর্ম অবমাননায় সমান শাস্তির বিধান চায় জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট

শান্তিতে নোবেল ঘোষণার আগে ওবামাকে নিয়ে ট্রাম্পের ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য

অতিরিক্ত মাথাব্যথা কি ব্রেন টিউমারের লক্ষণ?

১০

দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ

১১

সড়কে উঠতে বাধা, ট্রাফিক পুলিশের মাথা ফাটালেন অটোরিকশা চালক

১২

টানা ৩ দিন ৪ ঘণ্টার কম ঘুমালে কী হতে পারে, জানেন?

১৩

ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের কাছে মাঠে প্রমাণ চাইলেন আনচেলত্তি

১৪

হংকং ম্যাচে হারের পর যা বললেন হামজা

১৫

বিশ্ব ডিম দিবস আজ

১৬

ছুটির দিনেও ঢাকার বায়ু ‘অস্বাস্থ্যকর’

১৭

দেশে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল বিচ ক্রিকেট 

১৮

আ.লীগ নেতা তাজুল ইসলাম তাজ গ্রেপ্তার

১৯

নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে সুখবর পেল বাংলাদেশ

২০
X