সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ০২:৪০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভয় জাগাচ্ছে গ্রামের ডেঙ্গু

২০২৩ সাল থেকে রাজধানীর বাইরে বাড়তে থাকে রোগী
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স।
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স।

ডেঙ্গুকে বলা হতো শহুরে রোগ। দুই যুগের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও রোগী ব্যবস্থাপনার বড় পরিকল্পনা ছিল রাজধানী ঘিরে। তবু রোগটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। ঠেকানো যায়নি রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এই ডেঙ্গু এখন শহরের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও মশাবাহিত রোগটি হানা দিয়েছে। জুনের পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে শনাক্তের হার। ঢাকার চেয়ে বাইরের জেলাগুলোতেই এ বছর সংক্রমণ বেশি। এরই মধ্যে অন্তত ১০ জেলায় ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবার আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের চেয়ে এক বরগুনাতেই রোগীর সংখ্যা বেশি। এ বছর শনাক্ত রোগীর অন্তত প্রায় ৮০ শতাংশই ঢাকার বাইরের।

তবে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৮৭টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জরিপ, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সক্ষমতা কিংবা জনবল নেই। জেলা ও উপজেলা সরকারি হাসপাতালের সামান্য শয্যা আর স্বল্প বাজেটের সীমিত জনবলেই চলছে ডেঙ্গুর মোকাবিলা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যদি গ্রামীণ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চঝুঁকির জেলাগুলোকে ঘিরে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ঢাকার বাইরে বড় জনগোষ্ঠীকে আরও অন্তত তিন দশক ধরে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এরপর গত ২৫ বছরে আমরা ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আরও যে কত বছর লাগবে সেটাও জানা নেই। ঢাকার বাইরে পাঁচগুণ মানুষের বসবাস। অথচ ঢাকার বাইরে মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অন্তত উচ্চ সংক্রমণের ১০ জেলা ঘিরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মহাপরিকল্পনা এখনই গ্রহণ না করলে ধারণা করা হয়, ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু আগামী ৩০-৪০ বছর আমাদের ভোগান্তিতে ফেলবে। এটা খুব সহজে অনুমান করা যায়।’

পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর ভৌগোলিক বিস্তারে পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময়ে ঢাকার বাইরে রোগী শনাক্তের হার পাঁচগুণ বেড়েছে। অথচ ২০২১ সালেও ডেঙ্গু ছিল মূলত রাজধানীকেন্দ্রিক। ওই বছর মোট রোগীর ৮৩ দশমিক ০৭ শতাংশই ছিল রাজধানীতে। ধীরে ধীরে পাল্টে গেছে সেই চিত্র। ২০২২ সালে ঢাকার রোগীর হার কমে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ৮৭ শতাংশে। অন্যদিকে, ঢাকার বাইরের রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ১৩ শতাংশে। ২০২৩ সালে রাজধানীকে ছাড়িয়ে যায় বাইরের রোগী। ওই বছর ঢাকায় রোগী ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে ঢাকায় রোগী আবার কিছু বেড়ে ৩৯ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছায়, আর ঢাকার বাইরে রোগীর হার দাঁড়ায় ৬০ দশমিক ৭০ শতাংশ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট ১৬ হাজার ৩৯৫ জনের শরীরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৫৬ জন (৭৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ) রোগীই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের বাসিন্দা। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৫৩৯ জন, যা দেশে শনাক্ত হওয়া মোট রোগীর ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চলতি বছর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৬ হাজার ৩৯৫ জনের মধ্যে রাজধানীর ৮৭ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৩ হাজার ৫৩৯ জন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ১২ হাজার ৮৫৬ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে এক বরগুনাতেই রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৫৭ জন, আর বরিশাল বিভাগে ৬ হাজার ৬৪৪ জন, যা দেশের সব বিভাগের চেয়ে বেশি।

ঢাকার বাইরে চার এলাকা ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে: ঢাকার বাইরে চার পৌর এলাকায় এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এই চার পৌরসভা হলো ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী। এসব এলাকাকে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সংশ্লিষ্টরা। জরিপ করতে প্রতিটি এলাকায় ৯ ওয়ার্ডে ২১৪টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। জরিপে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ৬০ শতাংশ। এরপর মাগুরায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ শতাংশ ও পটুয়াখালীতে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, কুষ্টিয়ায় ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তিন সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও বরিশালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাসাবাড়িতে লার্ভার উপস্থিতির হিসেবে বরগুনা জেলার জরিপে পৌর এলাকায় ৩১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৭৬ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর বাইরে মাগুরার পৌর এলাকায় ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ঝিনাইদহে ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, পিরোজপুরে ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং কুষ্টিয়ার পৌর এলাকার ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। লার্ভা পাওয়ার শতকরা হার বা হাউজ ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বিবেচনা করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পায়রা বন্দর ঘিরে বহুমুখী পরিকল্পনা করেছে সরকার : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

মিরপুরে বাসায় ডাকাতি, পালানোর সময় আটক ৪

যারা মবতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তারাই নির্বাচনবিরোধী : টুকু

স্বাধীনতা বিরোধীদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে : বিএনপি নেতা নীরব

৪৮ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হলেন সাব্বিরুল আলম

আজ ‘মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’, অনুষ্ঠানমালা থাকছে সারা দিন

সরকারের অভিলাষ নিয়ে আমরা শংকিত : চরমোনাই পীর

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে : লুৎফর রহমান

পিনাকী ভট্টাচার্যসহ বেশ কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির

১০

গণমিছিলে গিয়ে বিএনপি নেতার আকস্মিক মৃত্যু

১১

বাহাত্তরের সংবিধানে সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি : নাহিদ

১২

খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু

১৩

আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছে : নাহিদ 

১৪

সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কী বললেন মির্জা ফখরুল

১৫

এনআইডি আবেদনে ফের সুযোগ

১৬

সীমিত হতে পারে টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা!

১৭

মাদ্রাসার শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা, গণপিটুনিতে হত্যাকারী নিহত

১৮

পল্টন মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণ

১৯

একাত্তরের মতো চব্বিশ নিয়ে যেন চেতনা ব্যবসা না হয় : সালাহউদ্দিন আহমেদ

২০
X