আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ দক্ষিণ সুদান। তবে দেশটির প্রধানতম ওয়াও শহরের তিন রাস্তার মিলনস্থলে এখন শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। পাশেই রয়েছে দক্ষিণ সুদানের জাতির পিতা জন গ্যারাঙ ডি মাবিওর প্রতিকৃতি। দুই দেশের জাতির পিতাকে স্মরণ আর বন্ধুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে জাতিসংঘের দক্ষিণ সুদানে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা ‘সাউথ সুদান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ মনুমেন্ট’ নামে দৃষ্টিনন্দন ওই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছেন।
গত ১৩ জুন দক্ষিণ সুদানের ওয়াও শহরে ব্যানব্যাট-৬ কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মনুমেন্ট উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ছিলেন দক্ষিণ সুদানের স্থানীয় সরকারের মন্ত্রী ইব্রাহিম সুরুর ইব্রাহিম এবং ৫ এলিফ্যান্ট ডিভিশনের চিফ অব অপারেশন মেজর জেনারেল মাকুয়েই কির আকুক। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে দক্ষিণ সুদানে কর্মরত বাংলাদেশের কান্ট্রি সিনিয়র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং পদাতিক পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে
চিকিৎসাসেবা, গবাদি পশুর চিকিৎসা, বিদ্যালয়ে বই-খাতা ও স্টেশনারি প্রদান, কৃষকদের কৃষি উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির বীজ সরবরাহ, ছিন্নমূল মানুষদের জামাকাপড় সরবরাহ, যুবক ও শিশুদের খেলাধুলা সামগ্রী প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল এ সময় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। তিনি বিদেশের মাটিতে দেশের সুনামকে সমুন্নত রাখতে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ও নিরলসভাবে কাজ করতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। দক্ষিণ সুদানে শত প্রতিকূলতার মাঝেও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ায় তিনি সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
ব্যানব্যাট-৬ এর বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই দেশের জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংবলিত দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভটি ওয়াও শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫ এলিফ্যান্ট ইনফান্ট্রি ডিভিশনের প্রধান ফটক সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। তিন রাস্তার মিলনস্থলের উত্তরে বাহার আল গাজাল ও ওয়াররাপ স্টেটে যাওয়ার মূল সড়ক, দক্ষিণে ওয়াও বিমানবন্দর, পূর্বে ওয়াও মূল শহর এবং পশ্চিমে ৫ এলিফ্যান্ট ইনফান্ট্রি ডিভিশন সদর দপ্তর। মনুমেন্টের ওপরের দিকে শুরুতেই জাতীয় পতাকা রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র এবং দক্ষিণ সুদানের মানচিত্র রয়েছে। এরপরই দুই পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জন গ্যারাঙ ডি মাবিওর প্রতিকৃতি শোভা পাচ্ছে। মাঝে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে করমর্দনের ছবি স্থাপন করা হয়েছে।
জন গ্যারাঙ ডি মাবিওর একজন উন্নয়নমূলক অর্থনীতিবিদ এবং দক্ষিণ সুদানের একজন বিপ্লবী নেতা। তার পরিচালিত আন্দোলনগুলো দেশটির জনগণের মধ্যে সংহতি নিয়ে আসে। তিনি আজকের দক্ষিণ সুদানের প্রতিষ্ঠাতা পিতা এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
ছয় বছর ধরে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দক্ষিণ সুদানে শান্তিপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শান্তিরক্ষার পাশাপাশি ব্যানব্যাট দক্ষিণ সুদানে বিভিন্ন উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করে দেশটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
মন্তব্য করুন