ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া এলাকা। সেখানকার একটি আবাসিক ভবনের নিচতলায় ঝুলছে অ্যাসোসিয়েশন ফর সোসিও ইকোনমিক অ্যাডভান্সমেন্টের (এসিয়া) সাইনবোর্ড। অন্যপাশে বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ড। নিচতলার দুটি কক্ষের একটিতে বসে আছেন সংস্থার নির্বাহী প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এই দুটি কক্ষকে অফিস দাবি করলেও গত এক বছর একটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে বিউটি পার্লার হিসেবে।
‘এসিয়া’ নামের এ সংস্থাটি এবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পর্যবেক্ষক তালিকায় স্থান পেয়েছে। ঝিনাইদহে এমন আরও দুটি সংস্থাকে তালিকাভুক্ত করেছে, যাদের কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। এগুলো হলো সদর উপজেলার বিষয়খালী এলাকার ‘আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থা’ ও জেলা শহরের চাকলাপাড়া ‘হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা’।
তিনটি সংস্থার অফিস ঘুরে মিলেছে নানা অসংগতি। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এমন নাম সর্বস্ব নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইসির তালিকায় কীভাবে যুক্ত হলো, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার বিষয়খালী, খড়িখালী এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে বাজারের একটি আবাসিক ভবনে আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। পরে লোকসানে পড়ে সংস্থাটি ২০০৯ সালের দিকে মালিকানা বিক্রি করে দেওয়া হয় কালীগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছে। এরপর আর বাজারটিতে সংস্থার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
বিষয়খালী, খড়িখালী, ছোট-খড়িখালী কোনো গ্রামে গিয়েই পাওয়া যায়নি এ সংস্থার অফিস। এমনকি নির্বাচনের কমিশনের তালিকায় সংস্থার নির্বাহী প্রধান রোখসানা খাতুনের এলাকায় কোনো খোঁজ মেলেনি। এ এলাকার অনেক মানুষই জানে না—ঠিক কবে কার্যক্রম ছিল সংস্থাটির বা আদৌ ছিল কি না।
নির্বাহী প্রধানের নিজ মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। এ সংস্থার নির্বাহী প্রধান ও সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজেই। কক্ষটি বন্ধ ছিল। সাংবাদিক দেখে তিনি অফিস খুলে দেখান। দুটি অফিসের মধ্যে শুধু এসিয়া অফিসের একটি কক্ষে আনোয়ার হোসেনকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে তার পরিচালিত দুটি অফিসের একটিতেও অন্য কোনো সদস্যকে পাওয়া যায়নি। টেবিলে কম্পিউটার ও কিছু ফাইল দেখা যায়।
এসিয়া ও হেভেন এই দুই সংস্থার নির্বাহী প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি নিজেই দুটি প্রতিষ্ঠান চালাই। আমাদের সদস্য ২৮ জন। তবে আমি ছাড়া কারও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।’
অভিজ্ঞতা ছাড়া তারা কীভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন, আর নিজের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষকের তালিকায় স্থান পেল কীভাবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কমিশন থেকে প্রশিক্ষণ দেবে, তাতেই চলবে। সদস্যরা শিখে নেবেন। আর কমিশন তালিকা চেয়েছিল আমরা আবেদন করে সেই তালিকায় স্থান পেয়েছি। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এদিকে বিষয়খালী বাজারের ব্যবসায়ী দবির আলী ও খড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, বাজারের একটি আবাসিক ভবনের আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় ছিল, যা প্রায় ১৭ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। আর গ্রামেও এ সংস্থার কাজ আছে বলে শুনিনি, তাদের সংস্থাও দেখিনি।
আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইমদাদুল হক পিন্টু বলেন, ‘লোকসানে পড়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরপর আর কোনো কার্যক্রম আছে বলে আমার জানা নেই।’
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বলেন, ‘অনেক আগে আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যক্রম ছিল। ঋণদানের কাজ হতো। বহু বছর তাদের কোনো কাজ চোখে পড়ে না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় এমন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম আসা খুবই দুঃখজনক। তারা নিজেরাই কোনোদিন পর্যবেক্ষণ করেনি। তাহলে তাদের দিয়ে কতটুকু কাজ আশা করা যায়।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ সংস্থার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেভাবেই সংস্থাগুলো আবেদন করে। এখানে জেলার কোনো ভূমিকা নেই।’
মন্তব্য করুন