

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কারা? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। মনোনয়নের দৌড়ে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। প্রতিটি আসনে ধানের শীষের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় শেষ পর্যন্ত কার কপাল খুলবে, সে হিসাব মেলানো যাচ্ছে না খুব সহজে। তবে অপেক্ষার পালা এবার শেষের দিকে—আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রামের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে বৈঠক হবে। দলের সিনিয়র নেতারা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকের পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হতে পারে। চট্টগ্রাম জেলার পাশাপাশি বিভাগের অন্যান্য আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও ডাকা হয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এবার বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র। তবে জোটগত কারণে চট্টগ্রামের কয়েকটি আসন বিএনপি ছেড়ে দিতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাদের জন্য মাঠপর্যায়ে তৎপরতা চালানোর বাধা কেটেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হতে আগ্রহী নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কিন্তু প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের রাউজান ও মীরসরাই উপজেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জাতীয় পর্যায়েও সমালোচনা হয়েছে। তাই এ দুটি আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব দেখাবে হাইকমান্ড। এ ছাড়া একক প্রার্থী ঘোষণার পর যেন দলে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র নেতারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে গত আগস্ট থেকে চলতি মাস পর্যন্ত মনোনয়প্রত্যাশীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাদের পর্যবেক্ষণ এবং তৃণমূল থেকে সংগৃহীত তথ্য বিচার-বিশ্লেষণের পর চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে আজকের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে চট্টগ্রাম জেলার ১৬ আসনের পাশাপাশি ডাকা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্য ৭ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও।
দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা কালবেলাকে বলেন, চলতি মাসেই প্রার্থীদের দল থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হবে। যারা সিগন্যাল পাবে তাদের সঙ্গে বাকিরা যেন একত্রিত হয়ে মাঠে থাকেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং ত্যাগী নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ প্রার্থীরাও অগ্রাধিকার পেতে পারেন। এ ছাড়া ব্যক্তি আক্রোশের বশে কেউ যেন দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করেন, সে বিষয়েও কঠোরভাবে সতর্ক করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক বছরে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী। কিন্তু আজকের বৈঠকে ডাক পেয়েছেন ৪৫ জন। এ ছাড়া বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের ৪টি, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩টি, নোয়াখালীর ৬টি, লক্ষ্মীপুরের ৪টি এবং ফেনীর ৪টিসহ ৩৬টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আজকের বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
আজকের বৈঠকে ডাক পাওয়া কয়েকজন প্রার্থী কালবেলাকে বলেন, এতদিন মাঠে ছিলাম, বিগত ১৭ বছর দলের আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্তও থেকেছি। অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি, জেলে খেটেছি। এবার ভাগ্যের পরীক্ষা হবে। আশা দল সব কিছু বিবেচনা করবে। সন্দ্বীপ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য দলের নেতাদের ঐক্যের বিকল্প নেই। আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী, তবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজ করে যাব। রাউজান থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতা জসিম উদ্দীন সিকদার কালবেলাকে বলেন, গতবার দলের মনোনয়ন নিয়ে রাউজান থেকে সংসদ নির্বাচন করেছিলাম। ভোট চুরির নির্বাচনে সারা দেশের মতো রাউজানেও পরাজিত করা হয়েছে আমাকে। এবারও দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম কালবেলাকে বলেন, আজ গুলশান অফিসে চট্টগ্রামের ১৬, কক্সবাজারের ৪, তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ৩, নোয়াখালীর ৬, লক্ষ্মীপুরের ৪ এবং ফেনী জেলার ৩ আসনসহ ৩৬ সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন