

মহাবিশ্বের অন্যতম রহস্য ‘ডার্ক ম্যাটারের’ অস্তিত্ব প্রমাণের আরও কাছাকাছি পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ছায়াপথের কেন্দ্রে ছড়িয়ে থাকা এক ধরনের মৃদু গামা রশ্মির আলো শনাক্ত ও মানচিত্রায়ণ করে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা দুটি ধারণা পেয়েছেন, যা দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্সে প্রকাশিত গবেষণাটির বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বিশাল অংশজুড়ে যে অতিরিক্ত গামা রশ্মি শনাক্ত ‘ফার্মি গামা-রে স্পেস’ নামের টেলিস্কোপ। এর উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা দুটি ভিন্ন ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। একটি হলো, এসব গামা রশ্মি তৈরি হয়েছে ডার্ক ম্যাটারের বিভিন্ন কণার সংঘর্ষে, যেগুলো ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে জমে আছে। অন্যটি, এগুলো আসলে এক বিশেষ ধরনের নিউট্রন তারা, যা বিশালাকার বিভিন্ন তারার মৃত্যুর পর সংকুচিত ও ঘন হয়ে গঠিত হয়। উন্নত সিমুলেশনসহ আরও বড় পরিসরে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দুটি ব্যাখ্যাই সম্ভব।
গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক ম্যাটারের বিভিন্ন কণার সংঘর্ষে যদি গামা রশ্মি তৈরি হয়, সেই রশ্মির ধরন ও তীব্রতা ‘ফার্মি’ স্যাটেলাইটে ধরা পড়া গামা রশ্মির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।
গবেষণা দলটির নেতৃত্ব দেওয়া জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির মহাকাশবিজ্ঞানী জোসেফ সিল্ক বলেন, ‘আমাদের গবেষণার প্রধান ফলাফল হচ্ছে, গামা রশ্মির তথ্য বিশ্লেষণে ডার্ক ম্যাটারের তত্ত্বও মিলে যাচ্ছে, একইভাবে নিউট্রন তারার তত্ত্বের সঙ্গেও। আমরা প্রায় নিশ্চিত যে, সম্ভবত ডার্ক ম্যাটারকে পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা গেছে।’
মহাবিশ্বে ২৭ শতাংশ অংশ জুড়ে অদৃশ্য পদার্থ ডার্ক ম্যাটার রয়েছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। ডার্ক ম্যাটার কোনো আলো শোষণ, প্রতিফলন বা বিকিরণ করে না। এ ছাড়া মহাবিশ্বে দৃশ্যমান সবকিছুই যেমন—তারা, গ্রহ, মানুষ থেকে শুরু করে যা কিছু মানুষ বানায় সেসবই। আর এসব সাধারণ পদার্থ আসলে মহাবিশ্বের কেবলই ৫ শতাংশ। আর বাকি প্রায় ৬৮ শতাংশ অংশ গঠিত হয়েছে আরেক রহস্যময় উপাদান ‘ডার্ক এনার্জির’ মাধ্যমে।
গবেষকরা এখন চিলিতে নির্মাণাধীন ভূ-পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী গামা-রে টেলিস্কোপ ‘চেরেনকভ টেলিস্কোপ অ্যারে অবজারভেটরি’র কাজ শেষের অপেক্ষায় আছেন। তাদের ধারণা, টেলিস্কোপটি সম্ভবত এ দুটি উৎস থেকে আসা গামা রশ্মি আলাদা করতে পারবে এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত উত্তর দিতে পারবে। আর চলতি বছরেই চালু হতে পারে এ টেলিস্কোপ।
মন্তব্য করুন